Movie Review:The Song of Sparrows (2008)-Iran

মুভির গল্পটি করিম সাহেব এবং তার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার কে নিয়ে । তিনি এবং তার  স্ত্রী. দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তেহরানের অদূরে  এক গ্রামে বাস করে । তার বড় মেয়েটি আবার কানে কম শুনে। করিম সাহেব একটি উট পাখির খামারে কাজ করে। এবং এটি তাদের একমাত্র আয়ের উৎস।

একদিন বাড়িতে এসে সে জানতে পারে যে তার মেয়ের হেয়ারিং এইড টি পাশের ডোবায় পড়ে গেছে। যদিও পরে হেয়ারিং এইড টি তার ছেলে  হোসেন খুঁজে পায়  কিন্তু সেটা ততক্ষণে নষ্ট হয়ে গেছে।হোসেন এবং তার বন্ধুরা ডোবায় হেয়ারিং এইড টি খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে এই খানে মাছ ছেড়ে এবং তা বিক্রি করে তারা অনেক টাকার মালিক হতে পারবে ।তাই তারা ঐ ডোবাটি পরিষ্কার করে মাছ ছাড়ার উপযোগী করতে থাকে।

এরই মধ্যে উট পাখির খামার থেকে একটি পাখি পালিয়ে গেলে করিম সাহেবের চাকরি চলে যায় । কিন্তু তার চাকরি চলে যাওয়ার বিষয়টি সে তার পরিবারকে  জানায় না।

করিম সাহেব তার মেয়ের হেয়ারিং এইডটি নিয়ে তেহরান গিয়ে জানতে পারে নতুন একটি হেয়ারিং এইডের দাম ৩,৫০,০০০ রিয়াল।এদিকে চাকরি নেই অপরদিকে তাকে আবার তার মেয়ের হেয়ারিং এইড কেনার টাকা সংগ্রহ করতে হবে খুব দ্রুত কারণ কিছুদিন পরই তার মেয়ের পরীক্ষা ।

তেহরানে এসে সে ঘটনাক্রমে হয়ে যায় ভ্রাম্যমান যাত্রীবাহক, সে তার মোটরসাইকেলের মাধ্যমে লোকজন ও মালপত্র বহন করা শুরু করে এবং এভাবে সে  ভাল টাকা উপার্জন করতে থাকে। আবার সে প্রতিদিন বাড়িতে ফেরার সময় তার মোটরসাইকেলের পেছনে করে শহর থেকে বিভিন্ন পরিত্যক্ত জিনিস এনে বাড়িতে জমা করতে থাকে।

তবে টাকা উপার্জন করে গিয়ে করিম সাহেব  কিছুটা অর্থলোভী হয়ে যায় কারণ একবার দেখা যায় যে ভুলে তার কাছে থেকে যাওয়া একটি ফ্রিজ সে বিক্রি করার চেষ্টা করে । কিন্তু বিক্রি করতে না পারায় সেটা সে ফেরত দেয় এবং সে কারণে তাকে পুরস্কৃত করা হয়

।আবার দেখা যায় শহর থেকে আনা একটি নীল দরজা  তার স্ত্রী তাদের প্রতিবেশীকে দিলে করিম সাহেব সেই দরজাটি ঐ বাড়িতে গিয়ে আবার ফেরত আনে।

অবশ্য করিম সাহেব নিজেও একদিন প্রতারকের শিকার হন। একদিন এক যাত্রী তার বাইক থেকে নেমে চলে যাচ্ছিলো ।করিম সাহেব তার কাছে ভাড়া চাইলে সেই যাত্রী তাকে বলে, 'তোমাকে আমি ২০০০ টাকার নোট দিয়েছি, ভাড়া ৫০০ টাকা, বাকি ১৫০০ টাকা আমাকে ফেরত দাও, এই কথা বলে ঐ যাত্রী পুলিশ ডাকতে থাকে।সহজ সরল করিম সাহেব ভয়ে সেখান থেকে ভাড়া না নিয়েই পালিয়ে চলে আসে।

অন্যদিকে জলাধারটি পরিষ্কার হয়ে গেলে হোসেন তার বাবার শত বাধাকে উপেক্ষা করে তার বন্ধুদের নিয়ে মাছ কেনার অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতে থাকে।

কিন্তু সব কিছুই ওলট পালট হয়ে যায় যখন একদিন করিম সাহেব বাড়িতে স্তূপ করে রাখা পুরাতন মালামাল পরিষ্কার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন এবং সাময়িকভাবে পঙ্গু হয়ে যান.......

আর বলছি না বাকি টুকু মুভিতে দেখুন।

🔴মন্তব্য : The Song of Sparrows (2008) #মাজিদ_মাজিদির আরও একটি অনবদ্য সৃষ্টি।নির্মম বাস্তবতাকে সুন্দর ভাবে এই মুভিতে তুলে ধরা হয়েছে।যেটা সব ইরানী মুভিতেই কম-বেশি দেখা যায়।এজন্যই  ইরানী মুভি আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে।তাদের মুভি দেখলে জিবনকে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি যায়।

একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার যাদের খুব বেশি চাহিদা নেই ,কিন্তু তাদের সেই অল্প চাহিদাটুকুর পূরণের জন্য তাদের কত সংগ্রাম করতে হয় মুভিতে সেটাই দেখানো হয়েছে।তাদের কষ্টে আপনার মনকে কাঁদাবে এবং তাদের ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত আপনাকে হাসাবে।

জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত কিন্তু পরাজিত না হওয়া এক পিতার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করছে করিম সাহেব । শত কষ্টের মাঝেও সে ভেঙ্গে পড়েনি, যেমন- চাকরি চলে যাওয়ার পর তার স্ত্রী যখন তাকে জিঙ্গাসা করে- 'তুমি তোমার কাজের জিনিসপত্র সব নিয়ে এসেছো কেন'?
উত্তরে সে বলে - ঐ চাকরিটা আমার জন্য না।
ওদের বেতন ভালো না। আর আমি ঐ বলদ উট পাখীদের নিয়ে কাজ করতে চাই না'। আবার দেখা যায় তার স্ত্রী যখন  মন খারাপ করে তখন সে গান শুনিয়ে তাকে খুশি করার চেষ্টা করে।

হোসেনের চরিত্রটি আমাকে ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয় ।বাবার বাধা সত্বেও পরিত্যক্ত ডোবাটি বন্ধুদের নিয়ে পরিষ্কার করা ।বিভিন্ন ভাবে মাছ কেনার টাকা সংগ্রের চেষ্টা করা এবং তা করতে গিয়ে বাবার দৌড়ানই খাওয়া। আবার তার জমানো টাকা দিয়ে হাসপাতালে বাবার জন্য জুস কিনে আনা.......।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.