Movie Review:The Color of Paradise (1999)-Iran

Director:Majid Majidi
Imdb:8.2

🔴Storyline :৮/৯ বছরের মোহাম্মদ একজন প্রতিবন্ধী বালক।সে জন্মগত ভাবে অন্ধ তবে  খুব বুদ্ধিমান এবং প্রকৃতিপ্রেমী। সে পাখি এবং পাখির ডাক খুব পছন্দ করে। মোহাম্মদের মা নেই তবে বাবা আছে। তার বাবা একজন কয়লার শ্রমিক।তাছাড়া পরিবারে মোহাম্মদের আছে ছোট দুই বোন এবং বৃদ্ধা এক দাদী।মোহাম্মদ অন্ধ তাই তার বাবা তাকে খুব একটা পছন্দ করে না। সে মোহাম্মদকে  বোঝা মনে করে। তবে তার দুই বোন এবং দাদী তাকে খুব ভালবাসে।

মোহাম্মদ প্রতিবন্ধীদের বোর্ডিং স্কুলে পড়ে যেটা তেহরানে অবস্থিত। স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হলে সবার বাবা-মা তাদের সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আসে। মোহাম্মদও বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈারী হয়ে  তার বাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।সবাই তাদের বাবা-মার সাথে চলে যায়, রয়ে যায় শুধু মোহাম্মদ একা। সে একা একা অনেকক্ষণ তার বাবার  আসার অপেক্ষা করে কিন্তু তার বাবা আসে না।

পরেরদিনও সে তার বাবার জন্য অপেক্ষা করে তবে সে মনে মনে ধরে নেয় তার বাবা আর কখনো তাকে নিতে আসবে না।শেষ পর্যন্ত ঐদিন তার বাবা আসে। তবে এসেই সে  হেডস্যারকে জানায় মোহাম্মাদকে সে বাড়িতে নিতে যেতে পারবে না কেননা ওখানে তাকে দেখা-শুনা করার মতো কেউ নেই। কিন্তু হেডস্যারের আপত্তির কারণে বাধ্যই হয়েই তার বাবা তাকে নিয়ে বাড়িতে রওয়ানা দেয়।

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মোহাম্মদ বাড়িতে পৈছায়। যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিলো তার দুই বোন ও দাদি।তাদের পেয়ে মোহাম্মদ খুবই খুশি হয়।তাদের সাথে সারাদিন পাহাড়, ঝর্না, ফুল, প্রজাপতির পিছনে ছুটে তার সময় চলে যায়।

একদিন মোহাম্মদ তার বোনদের সাথে গ্রামের স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু তার বোনরা তাকে রেখেই চলে যায়। যদিও পরে তার  দাদী  নিজেই মোহাম্মদকে স্কুলে দিয়ে যায়। সেখানে তার প্রতিভা দেখে স্কুলের শিক্ষক এবং ছাত্র ছাত্রীরা সবাই অবাক হয়ে যায়।কিন্তু এ সব কিছুই তার রুক্ষ বাবার মনে তার জন্য ভালবাসা জন্ম দিতে পারেনি।


মোহাম্মাদের বাবা  এক বিধবা মহিলাকে পছন্দ করে এবং তাকে বিয়ে করতে চায় ।  কিন্তু এই বিয়েতে সে মোহাম্মাদকে বাধা মনে করে। কারণ তার ছেলে যে অন্ধ এটা সে মেয়ে পক্ষকে বলে না,সে ভয় পায় যদি এর জন্য বিয়ে ভেঙ্গে যায়। তাই সে মোহাম্মাদকে দূরে কোথাও সরিয়ে দেয়ার চিন্তা করে।


একদিন সাগর দেখানোর কথা বলে মোহাম্মাদকে তার বাবা বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এটা আবার মোহাম্মদের দাদি জানে না। সাগর দেখাতে তাকে ঠিকই নিয়ে যায়, তবে সেখান থেকে তাকে জোর করে ধরে অনেক দূরে এক অন্ধ কার্পেন্টারের কাছে রেখে আসে, কাজ শিখার জন্য।

************spoiler alert************
.
.
.
.
.
.
.
.
.
************spoiler alert************
.
.
.

মোহাম্মদের মন খারাপ দেখে ওই অন্ধ কার্পেন্টার যখন মোহাম্মদকে জিজ্ঞেস করে যে তাঁর বাড়ির জন্য মন খারাপ হচ্ছে কিনা? তখন উত্তরে মোহাম্মদ বলে;-
"আপনি জানেন না, কেউ আমাকে ভালবাসে না।
এমনকি দাদীও না।
তারা সবাই আমার থেকে দূরে চলে গেছে,
কারণ আমি অন্ধ।
যদি আমি চোখে দেখতাম...
আমি অন্য ছেলেদের সাথে এলাকার স্কুলে যেতে পারতাম।
কিন্তু এখন আমাকে অন্ধদের স্কুলে যেতে হয়...
পৃথিবীর ওপর প্রান্তে"

মুহাম্মদকে রেখে আসার বিষয়টি তার  দাদি মেনে নিতে পারেনি । সে ছেলের সাথে রাগ করে বৃষ্টিতে ভিজেই বাড়ি থেকে চলে যায় । পরে অবশ্য মুহাম্মদের বাবা অনেক জোরাজুরি করে রাস্তা থেকে তাকে বাড়িতে ফেরত আনে কিন্তু সে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন পর মারা যায়। অন্যদিকে মেয়ে-পক্ষ মোহাম্মদের বাবাকে বিয়েতে মানা করে দেয়। মোহাম্মদের বাবা সিদ্ধান্ত নেয় মোহাম্মদকে বাড়িতে ফেরত আনবে।

মুহাম্মদকে ফেরত আনার জন্য সে ওই কার্পেন্টারের কাছে যায়। প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে সে মুহাম্মদকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেয়। মুহাম্মদকে ঘোড়ার উপরে তুলে দিয়ে তার বাবা সামনে হাটতে থাকে। তবে মোহাম্মদের মাঝে বাড়ি ফেরার জন্য আগের মতো আনন্দ নেই ।

তাদের গ্রামে প্রবেশ করতে হলে একটি ছোট গাছের ব্রিজ পার হতে হয়।যার নিচে বহমান খরস্রোতা নদী। তারা যখন ব্রিজটি পার হচ্ছিল তখন ব্রিজটি ভেঙ্গে গোড়াসহ মোহাম্মদ নিচের নদীতে পড়ে যায়। আমার কাছে মনে হয়েছে মুহাম্মদের বাবা ঐ মুহূর্তে কিছুটা দোটানার মধ্যে ছিল, সে মনস্থির করতে পারছিল না সে কি ছেলে কে বাঁচাবে নাকি ভেসে যেতে দিবে। তার এই চিন্তার মুহুর্তে মুহাম্মদ ভেসে যেতে থাকে।পিতৃত্ত্বের কাছে যখন পৃথিবীর মোহ পরাজিত হয় তখন সেও ছেলেকে বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দেয় তবে ততক্ষণে মুহাম্মদ ভেসে অনেক দূর চলে গেছে ।

সাগর পাড়ে জ্ঞান ফেরার পর মুহাম্মদের বাবা অদূরে মুহাম্মদকে পড়ে থাকতে দেখে। সে দৌড়ে ছেলের কাছে কিন্তু ততক্ষণে তার ছেলে না ফেরার দেশে চলে গেছে। বাবা ছেলেকে কোলে  নিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে আর তখন  তাদের মাথার উপর দিয়ে ডাকতে ডাকতে উড়ে যায় মুহাম্মদের প্রিয় এক ঝাক পাখি।


🔴আমার মন্তব্য: আমাদের সমাজেও অনেক মুহাম্মদে আছে  যারা আমাদেরই আত্মীয়-স্বজন, আমরাও হয়তো তাদের সাথে এমন অনেক আচরণ করি, যার জন্য তারাও তাদের মনের মধ্যে মোহাম্মদের মত দুঃখ-কষ্ট চেপে রাখে কিন্তু কারও কাছে প্রকাশ করতে পারে না । তারাও হয়তো মুহাম্মদের মতো -"তাদের মনের গোপন কথা আল্লাহর কাছে বলে".....তারাও হয়তো মুহাম্মদের মতো-" তাদের আঙ্গুলের স্পর্শে আল্লাহকে অনুবভ করার চেষ্টা করে".....।

মুভিটি দেখার সময়  একবারও মনে হয়নি যে তারা সবাই অভিনয় করছে , এতটাই বাস্তবসম্মত ছিল। আর মুহাম্মদের মুখের দিকে তাকালে কেন যেন চোখ দিয়ে পানি চলে আসতে চায়।

মুভির দৃশ্যায়ন ছিল অনেক সুন্দর । বিশেষ করে মুহাম্মদের গ্রামটি ছিল ছবির মত সুন্দর.... পাহাড়-ঝরনা, ফুল, নদী,পাখি, প্রজাপতি...... অসাধারণ।

অনেক দিন যদি না কেদে থাকেন তাহলে মুভিটি দেখুন ,মাঝে মাঝে কাঁদতে ভালই লাগে 😋😋 ।
মুভিটি অনেকেই আগে দেখেছেন, কেউ যদি না দেখে থাকেন তাহলে একবার হলেও দেখুন।

The Color of Paradise (1999)-Iran
Director:Majid Majidi
Imdb:8.2


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

দয়াকরে কমেন্টে স্পাম মেসেজ দেবেন না।