Maundy Thursday (2006)-South Korea

আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছে বা যারা জীবন নিয়ে খুবই হতাশ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত যদি সম্ভব হয় তাদের খুঁজে বের করে কোন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি যাদের সাজা খুবই দ্রুত কার্যকর হবে, তাদের সাথে ওই সকল শিক্ষার্থীদের কয়েক দিন কথা বলা বা দেখা করার ব্যবস্থা করা।যাতে ওই শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে তাদের ফেলে যাওয়া জীবন অন্য একজন মানুষের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।তারা যাতে বুঝতে পারে তুচ্ছ এবং তথি নগণ্য কারণে তারা যে জীবন ছেড়ে চলে যায়, অন্য একজন মানুষের ভিতরে সেই জীবন পাবার জন্য কতটা আকুতি এবং মিনতি কাজ করে পারে।

কথাগুলো বলছিলাম কারণ কোরিয়ান মুভি Maundy Thursday (2006) এর সাথে ইদানিং কালে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের অনেক মিল আছে। এই মুভির মূল চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী Moon জীবনের উপর অভিমান করে কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে, যদিও সে ব্যর্থ হয়।

Moon পেশায় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা এবং সাবেক গায়িকা।অনেক ধর্নাঢ্য ফ্যামিলির মেয়ে হলেও ছোটবেলায় তার উপর বয়ে যাওয়া এক ঘটনার কারণে সে পরিবার থেকে বিমুখ হয়ে হয়ে যায় এবং পরে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা থেকে সে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

শেষবার আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হবার পর তার এক নিকটাত্মীয় তাকে একপ্রকার জোর করেই এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাথে কথা বলার জন্য কারাগারে নিয়ে যায়।যে আসামির রায় কার্যকর হবে খুব শীঘ্রই।প্রথমে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে ওই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাথে কথা বলতে কয়েকবার কারাগারে যায়।

এবার আসি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অভিনেতা Jung ব্যাপারে;

Jung এর মা তাকে এবং তার একমাত্র অন্ধ ভাইকে ফেলে অন্য জায়গায় বিয়ে করে চলে যায়।তাদের বাবা তো আগে থেকেই নেই। তাই Jung এবং তার ৫-৬ বছরের অন্ধ ভাই বেঁচে থাকার জন্য রাস্তায় থাকতে শুরু করে। তখন তার বয়স কত হবে ১৫-১৬ । একদিন তারা ট্রেনে ভিক্ষা করে বেশ কিছু টাকা সংগ্রহ করে। বড় ভাই Jung ছোট ভাইকে বলে "আরো কিছু টাকা জমিয়ে তোমার চোখের চিকিৎসা করাবো"। ছোট ভাই তখন বড় ভাইকে বলে "না, তুমি আমাকে আগে নাইকি জুতা কিনে দিবা।তখন বড় ভাইও তাতে রাজি হয়।

এর একটু পরেই একদল টোকাই ছেলে এসে তাদের দুই ভাইকে বেধড়ক পিটিয়ে তাদের সংগ্রহ করা সকল টাকা নিয়ে যায়। তারা দুই ভাই প্রচন্ড জখম হয় কিন্তু টাকার অভাবে ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না।ঐদিন রাতে তারা ফুটপাতের পাশে শুয়ে থাকে এবং পরদিন সকাল বেলা বড় ভাই ঘুম থেকে উঠে দেখে তার ছোট ভাই মারা গেছে।এরপর বড় ভাইটি একা একা বড় হতে থাকে। এরপর একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে সে খুনের আসামী হয়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পায়।

প্রথম প্রথম অনিচ্ছা নিয়ে Moon কারাগার আসলে এক সময় খুব আগ্রহ নিয়েই প্রতি বৃহস্পতিবার Jung এর সাথে কথা বলার জন্য সে আসতে থাকে। আর এভাবেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং একজন আরেকজনের ছোটবেলার গল্প বলতে থাকে।ধীরে ধীরে Jung এর মৃত্যু কার্যকরের সময় ঘনিয়ে আসতে থাকে। তখন তার মধ্যে বাঁচার ইচ্ছা জাগে এবং সে মৃত্যুকে ভয় পেতে শুরু করে।শেষ পর্যন্ত কি হয়?

যে কয়টি মুভি দেখে আমি কোরিয়ান মুভির প্রেমে পড়েছিলাম তার মধ্যে Maundy Thursday মুভিটি অন্যতম একটি ।এই মুভির অভিনেত্রীর আর একটি মুভি  সম্ভবত দেখেছিলাম কিন্তু এর অভিনেতার আরো বেশ কয়েকটি মুভি আমি পরে দেখেছি। সে আমার কোরিয়ার সবচেয়ে প্রিয় অভিনেতার একজন।

মুভির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়,Background music, সিনেমাটোগ্রাফি সবকিছু ছিল খুবই ভালো।বিশেষ করে এর  Background music ছিল অসাধারণ।

তাহলে টিস্যু বক্স নিয়ে দেখতে শুরু করে দিন।টিস্যু বক্স নিয়ে দেখতে বসবেন কারণ আপনাকে কাঁদতে হবে, যেমনটা প্রায় সব ইমোশনাল কোরিয়ান মুভিতেই কাঁদতে করতে হয়।তবে আর দশটা মুভি থেকে এই মুভিটি অনেকটাই ভিন্ন কারণ এটি কোন ভালোবাসার গল্প নয় বরং জীবনের গল্প।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.