একটি নৈতিকতার গল্প
আমি তখন বেশ ছোট, সম্ভবত প্রাইমারি লেভেলে পড়ি। আমাদের বাসার কয়েকটা বাসা পিছনের বাড়িতে ফসল তোলার মৌসুমে এক ভদ্রলোক কাজের জন্য অন্য জেলা থেকে আসত। উনি এসে ধান মাড়াই, সরিষা তুলার কাজে সহযোগিতা করতো। এই ভদ্রলোকটি ভালো কিচ্ছা বা শুদ্ধ ভাষায় যেটা গল্প বলা তা খুব ভালো পারতো।
রাতের বেলা পুরো পাড়ার মানুষ জড়ো হতো উনার কাছ থেকে কিচ্ছা বা গল্প শোনার জন্য। উনি একটি গল্পকে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে বলত, যা শুনে মনে হতো কোনো মুভি বা নাটক দেখতেছি।
তো এই ভদ্রলোকের কাছ থেকে একটি গল্প শুনেছিলাম, যে গল্পটা এখনও অল্পস্বল্প আমার মাথায় রয়ে গেছে এবং সেই গল্পের সাথে এই মুভিটির অনেকাংশে মিল আছে।এই কথা এখনো মনে আছে কারণ গল্পটি আমার খুবই ভালো লেগেছিলো, আর অনেকাংশে মিল আছে বলছি কারন আমার যতটুকু মনে পড়ে আমার শোনা গল্পের সাথে মুভির গল্পের পুরোপুরি মিল নেই, তবে মূল অংশের/পয়েন্টের মিল আছে। আপনারাও হয়তো অনেকেই গল্পটি ছোটবেলায় শুনেছেন, মুভির প্লটটি পড়লে হয়তো মনে পড়ে যাবে।
এই মুভি সম্পর্কে ইন্টারনেট জগতে খুব বেশি তথ্য নেই, অন্তত আমি খুঁজে পাইনি। মুভির ডাউনলোড লিংকও কেউ খুজে পাবেন বলে আমার মনে হয় না। আমি খুঁজে পেয়েছি কারণ আমার বিদেশি ভাষার মুভি দেখতে অসম্ভব ভালো লাগে। আর তাই নিয়মিতই বিভিন্ন ভাষার মুভি খুজাখুজি করি। এভাবে খুঁজতে গিয়েই এই মুভিটি সন্ধান পাওয়া।
আচ্ছা তাহলে এবার মুভির গল্পে যাওয়া যাক;
মুভির শুরুটা হয় একটি স্বপ্নের মাধ্যমে।খুব আবছা এবং ঘোলাটে একটি স্বপ্ন। যেখানে দেখা যায় এক লোক উল্টো দিকে মুখ করে কোরআন তেলাওয়াত করছে। লোকটি মুখ তুলে যখন তাকাতে যাবে তখনই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।এই কোরআন তেলাওয়াত কারী ব্যাক্তির নাম হচ্ছে সাদেক, যে এই মুভির গল্পের অভিনেতা। আর গাড়িতে বসে যে নারী স্বপ্নটি দেখছিল তার নাম হচ্ছে 'সালমা'। এইরকম স্বপ্ন সালমা প্রায় নিয়মিতই দেখে কিন্তু কখনোই স্বপ্নে আসা সেই ব্যক্তির মুখ দেখতে পায় না।
আচ্ছা সালমা সম্পর্কে পরে বলি আগে সাদেক সম্পর্কে বলি;
১. সাদেক
সাদেক শহরে থেকে ইসলামিক বিষয়ে পড়ালেখা করে।তার পিতা-মাতা গ্রামে ফুল চাষ করে।একজন ভালো মানুষ বা ভালো মুসলমানের চরিত্র সম্পর্কে বলার জন্য শব্দগত যত গুলো বিশেষণ রয়েছে তার সবই যদি সাদেকের নামের সাথে ব্যবহার করা হয় তাহলেও তার সম্পর্কে কম বলা হবে।
সাদেক তার গ্রামের বাড়িতে আসার পরে তার মা তার হাতে কিছু উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে বলে "সে যেন তার খালার বাসায় গিয়ে তার খালাতো বোন নার্গিসকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়"।যেহেতু তার মা বলেছে সুতরাং সে রাজি হয়ে তার খালার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
খালার বাসায় যাবার পথে তার সাথে গাড়িতে দেখা হয় তারই বন্ধু আহমেদের।এক পর্যায়ে আহমেদ বুঝতে পারে সাদেক তার খালার বাসায় যাচ্ছে নার্গিসকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। এটা নিয়ে আহমেদ খুব ক্ষেপে গিয়ে সাদেকের উপর চড়াও হয়। কারণ আহমেদ এবং নার্গিস একে অপরকে পছন্দ করে, কিন্তু শুধুমাত্র সাদেকের কারনে নার্গিসের মা আহমেদের সাথে নার্গিসকে বিয়েতে রাজি হচ্ছে না। সুতরাং আহমেদ এবং নার্গিসের বিয়ের পথে সাদেক হচ্ছে বাঁধা।
সাদিক বিষয়টা বুঝতে পারে, তাই সে তার হাতের উপহারগুলো আহমেদকে দিয়ে বলে 'এগুলো তোমাদের বিয়েতে আমার পক্ষ থেকে উপহার'। এরপর সাদেক মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে মরুভূমির উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করে, উদ্দেশ্য শহরে যাওয়া। কিন্তু কিভাবে এবং কোন দিক দিয়ে যাবে সে সেটা জানে না। তারপরও সে হাঁটতে থাকে....
২.আপেল
এভাবে হাঁটতে হাঁটতে সাদেক অনেক দূর যাওয়ার পর একটি বিশাল বাগানে প্রবেশ করে। সে ওই বাগানের একটি আপেল গাছের নিচে যাওয়ার পর আযান শুনতে পায়।আপেল গাছের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি সুরু নালার পানি দিয়ে অজু করে সে আপেল গাছের নিচে নামাজ পড়ে।
নামাজের শেষ হওয়ার সাথে সাথে ওই আপেল গাছ থেকে একটি আপেল নালার পানিতে পড়ে।যেহেতু সাদেক অনেকদূর হেঁটে এসেছে তাই সে খুব ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত।আর তাই সে নালা থেকে আপেলটি উঠিয়ে এক কামড় খায়।এরপর দ্বিতীয় কামড় দেয়ার সময় তার খেয়াল হয় এই গাছের মালিককে না জিজ্ঞেস করে খাওয়াটা তার ঠিক হয়নি, এটা হারাম।
সে বাগানের মালিককে খুঁজতে গিয়ে এক বৃদ্ধকে পায়। সে ভাবে এই লোকটিই আপেল গাছের মালিক। তাই সে বৃদ্ধকে বলে, 'আপনার কাছে একটি আপেল না বলে খেয়ে ফেলেছি, আমাকে মাফ করে দিবেন'।
বৃদ্ধ এই কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। তাই সে সাদেককে বলে 'আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি আমার সাথে চলো, আমার সাথে নামাজ পড়ে কিছু খাবে, তারপর আমি মাফ করার ব্যাপারে কথা বলব'। খাওয়া-দাওয়ার পর সাদেক বুঝতে পারে বৃদ্ধ আসলে বাগানের মালিক নয়, একজন মালি।সে রেগে বৃদ্ধার বাড়ি থেকে চলে যায়। তবে যাবার আগে তার কাছ থেকে অন্য একজনের ঠিকানা নিয়ে যায়।
ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে সাদেক ওই ব্যক্তির কাছে আপেল খাওয়ার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে সে এবং আশপাশের মানুষ অবাক হয়ে যায়। ওই লোকটি তখন সাদেককে বলে, 'একটি আপেলই তো খেয়েছ, কোন সমস্যা নেই। তুমি না খেলেও এটা নষ্ট হয়ে যেত।এখন পুরোটা খেয়ে ফেলো'।
সাদেক ওই লোকের কথা মতো পুরো আপেলটি খেয়ে ফেলে। খাবার পর বুঝতে পারে ওই লোকটি আসলে বাগানের মালিক নয়, তখন সাদেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর ওই ব্যক্তি সাদেককে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
৩.সালমা
সাদেককে ওই ভদ্রলোক যে বাড়িতে নিয়ে আসে সেটা আসলে সালমার বাড়ি। সালমা হচ্ছে ওই বিশাল বাগানের মালিক। সে শহরে বসবাস করে এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। কিছুদিন আগে তার পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য সে এই বাড়িতে এসেছে। একটি আপেল খাওয়ার জন্য একজন মানুষ এভাবে অনুতপ্ত হতে পারে এটা দেখে সালমা অবাক হয়ে যায় এবং হাসাহাসি করে। তবে সাদেককে সে এত সহজে ক্ষমা না করে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়। সাদেক তখন পড়ে যায় আরো বিপদে.....
মন্তব্য;
মুভিটি খুব অল্প বাজেটের একটি মুভি।মুভিতে অভিনয় করা চরিত্রের সংখ্যাও খুব বেশি না। তারপরও মুভিতে কিছু উপাদান আছে যার কারণে এটা বারবার দেখতে এটি আকর্ষণ করে। বারবার বললাম কারণ আমি মুভিটি ৩-৪ বার দেখেছি। ছবিটি ভালো লাগার অনেক কারণে মধ্যে কয়টি হলো;
এই মুভির মুভির কালার গ্রেডিং মধ্যে অদ্ভুত এক ভালো লাগার আবহ আছে...যা সাদাকালো না আবার খুব রঙ্গিন না। কেমন যেন ধূসর ধূসর। মুভি দেখার সময় যা অন্য এক জগতে নিয়ে যায়।
মুভির সিনেমাটোগ্রাফি খুবই ভালো ছিল। এর ক্যামেরার ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। অদ্ভুত রকম সুন্দর ভাবে ক্যামেরার ব্যবহার অবশ্য সব ইরানি মুভিতেই কম বেশি দেখা যায়।
মুভিটি ভালোলাগার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক...যা এক কথায় অসাধারণ। এরপর আছে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়।মুভির মূল চরিত্রে অভিনয় করা সাদেকের বিষয়ে আমি আগেই বলেছি, তার চরিত্রটি খুবই,শান্ত শিষ্ট এবং ভদ্র মানুষের। সাদেকের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা এসব কিছুই খুবই নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
সাদেকের আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা, চালচলন দেখে যেকোনো মানুষ তার মায়ায় পড়ে যাবে। মুভির নায়িকাও পড়েছে কিন্তু সেটা সে প্রকাশ করেনি... তবে বোঝা যায়। নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রীর অভিনয়ও ছিল খুবই ভালো।
আমার কাছে এই মুভিটি একটি শিক্ষনীয় মুভি।মুভি থেকে মূল শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে নৈতিকতা।যদিও প্রায় সব ইরানি মুভিতেই নৈতিকতার বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে এই মুভিতে আরো বেশি করে তা তুলে ধরা হয়েছে।আর এই জন্য সাদিকের চরিত্রটিকে একজন পরিপূর্ণ নীতিবান মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সাদেককে যে ব্যক্তি আহত করে সেই ব্যক্তিকে সে উল্টো পুরস্কৃত করে, সালমা তাকে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করতে বলে রাতে ফিরে এসে দেখে সাদেক তখনো কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেছে.. কারণ সালমা বলে যায়নি কতক্ষণ পর্যন্ত পড়তে হবে। কথা বলার সময় সাদেক কখনোই সালমার দিকে চোখ তুলে তাকাইনি, তাই সালমা এটা নিয়েও অভিযোগ করে 'কেন সে কথা বলার সময় মুখের দিকে তাকায় না'।
সাদেকের কাছে সুযোগ ছিল রাজকন্যা এবং রাজত্ব দুটোই নেওয়ার, কিন্তু সে কোনটি না নিয়ে কোরআন শরীফে এই আয়াতের উপর নির্ভর বলেছে:
"আল্লাহ কি তাঁর বান্দাদের জন্য যথেষ্ট নয়"
নোট; মুভিটা দেখার অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম যে মুভির ঘটনাটি বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী
( র:) পিতাকে নিয়ে। এটা সত্য বা মিথ্যা এটা যাচাই করতে পারেনি। তবে আমি বলতে পারি, মূল চরিত্রকে এই মুভিতে যথাযথ সম্মান এবং খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আমি তখন বেশ ছোট, সম্ভবত প্রাইমারি লেভেলে পড়ি। আমাদের বাসার কয়েকটা বাসা পিছনের বাড়িতে ফসল তোলার মৌসুমে এক ভদ্রলোক কাজের জন্য অন্য জেলা থেকে আসত। উনি এসে ধান মাড়াই, সরিষা তুলার কাজে সহযোগিতা করতো। এই ভদ্রলোকটি ভালো কিচ্ছা বা শুদ্ধ ভাষায় যেটা গল্প বলা তা খুব ভালো পারতো।
রাতের বেলা পুরো পাড়ার মানুষ জড়ো হতো উনার কাছ থেকে কিচ্ছা বা গল্প শোনার জন্য। উনি একটি গল্পকে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে বলত, যা শুনে মনে হতো কোনো মুভি বা নাটক দেখতেছি।
তো এই ভদ্রলোকের কাছ থেকে একটি গল্প শুনেছিলাম, যে গল্পটা এখনও অল্পস্বল্প আমার মাথায় রয়ে গেছে এবং সেই গল্পের সাথে এই মুভিটির অনেকাংশে মিল আছে।এই কথা এখনো মনে আছে কারণ গল্পটি আমার খুবই ভালো লেগেছিলো, আর অনেকাংশে মিল আছে বলছি কারন আমার যতটুকু মনে পড়ে আমার শোনা গল্পের সাথে মুভির গল্পের পুরোপুরি মিল নেই, তবে মূল অংশের/পয়েন্টের মিল আছে। আপনারাও হয়তো অনেকেই গল্পটি ছোটবেলায় শুনেছেন, মুভির প্লটটি পড়লে হয়তো মনে পড়ে যাবে।
এই মুভি সম্পর্কে ইন্টারনেট জগতে খুব বেশি তথ্য নেই, অন্তত আমি খুঁজে পাইনি। মুভির ডাউনলোড লিংকও কেউ খুজে পাবেন বলে আমার মনে হয় না। আমি খুঁজে পেয়েছি কারণ আমার বিদেশি ভাষার মুভি দেখতে অসম্ভব ভালো লাগে। আর তাই নিয়মিতই বিভিন্ন ভাষার মুভি খুজাখুজি করি। এভাবে খুঁজতে গিয়েই এই মুভিটি সন্ধান পাওয়া।
আচ্ছা তাহলে এবার মুভির গল্পে যাওয়া যাক;
মুভির শুরুটা হয় একটি স্বপ্নের মাধ্যমে।খুব আবছা এবং ঘোলাটে একটি স্বপ্ন। যেখানে দেখা যায় এক লোক উল্টো দিকে মুখ করে কোরআন তেলাওয়াত করছে। লোকটি মুখ তুলে যখন তাকাতে যাবে তখনই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।এই কোরআন তেলাওয়াত কারী ব্যাক্তির নাম হচ্ছে সাদেক, যে এই মুভির গল্পের অভিনেতা। আর গাড়িতে বসে যে নারী স্বপ্নটি দেখছিল তার নাম হচ্ছে 'সালমা'। এইরকম স্বপ্ন সালমা প্রায় নিয়মিতই দেখে কিন্তু কখনোই স্বপ্নে আসা সেই ব্যক্তির মুখ দেখতে পায় না।
আচ্ছা সালমা সম্পর্কে পরে বলি আগে সাদেক সম্পর্কে বলি;
১. সাদেক
সাদেক শহরে থেকে ইসলামিক বিষয়ে পড়ালেখা করে।তার পিতা-মাতা গ্রামে ফুল চাষ করে।একজন ভালো মানুষ বা ভালো মুসলমানের চরিত্র সম্পর্কে বলার জন্য শব্দগত যত গুলো বিশেষণ রয়েছে তার সবই যদি সাদেকের নামের সাথে ব্যবহার করা হয় তাহলেও তার সম্পর্কে কম বলা হবে।
সাদেক তার গ্রামের বাড়িতে আসার পরে তার মা তার হাতে কিছু উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে বলে "সে যেন তার খালার বাসায় গিয়ে তার খালাতো বোন নার্গিসকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়"।যেহেতু তার মা বলেছে সুতরাং সে রাজি হয়ে তার খালার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
খালার বাসায় যাবার পথে তার সাথে গাড়িতে দেখা হয় তারই বন্ধু আহমেদের।এক পর্যায়ে আহমেদ বুঝতে পারে সাদেক তার খালার বাসায় যাচ্ছে নার্গিসকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। এটা নিয়ে আহমেদ খুব ক্ষেপে গিয়ে সাদেকের উপর চড়াও হয়। কারণ আহমেদ এবং নার্গিস একে অপরকে পছন্দ করে, কিন্তু শুধুমাত্র সাদেকের কারনে নার্গিসের মা আহমেদের সাথে নার্গিসকে বিয়েতে রাজি হচ্ছে না। সুতরাং আহমেদ এবং নার্গিসের বিয়ের পথে সাদেক হচ্ছে বাঁধা।
সাদিক বিষয়টা বুঝতে পারে, তাই সে তার হাতের উপহারগুলো আহমেদকে দিয়ে বলে 'এগুলো তোমাদের বিয়েতে আমার পক্ষ থেকে উপহার'। এরপর সাদেক মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে মরুভূমির উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করে, উদ্দেশ্য শহরে যাওয়া। কিন্তু কিভাবে এবং কোন দিক দিয়ে যাবে সে সেটা জানে না। তারপরও সে হাঁটতে থাকে....
২.আপেল
এভাবে হাঁটতে হাঁটতে সাদেক অনেক দূর যাওয়ার পর একটি বিশাল বাগানে প্রবেশ করে। সে ওই বাগানের একটি আপেল গাছের নিচে যাওয়ার পর আযান শুনতে পায়।আপেল গাছের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি সুরু নালার পানি দিয়ে অজু করে সে আপেল গাছের নিচে নামাজ পড়ে।
নামাজের শেষ হওয়ার সাথে সাথে ওই আপেল গাছ থেকে একটি আপেল নালার পানিতে পড়ে।যেহেতু সাদেক অনেকদূর হেঁটে এসেছে তাই সে খুব ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত।আর তাই সে নালা থেকে আপেলটি উঠিয়ে এক কামড় খায়।এরপর দ্বিতীয় কামড় দেয়ার সময় তার খেয়াল হয় এই গাছের মালিককে না জিজ্ঞেস করে খাওয়াটা তার ঠিক হয়নি, এটা হারাম।
সে বাগানের মালিককে খুঁজতে গিয়ে এক বৃদ্ধকে পায়। সে ভাবে এই লোকটিই আপেল গাছের মালিক। তাই সে বৃদ্ধকে বলে, 'আপনার কাছে একটি আপেল না বলে খেয়ে ফেলেছি, আমাকে মাফ করে দিবেন'।
বৃদ্ধ এই কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। তাই সে সাদেককে বলে 'আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি আমার সাথে চলো, আমার সাথে নামাজ পড়ে কিছু খাবে, তারপর আমি মাফ করার ব্যাপারে কথা বলব'। খাওয়া-দাওয়ার পর সাদেক বুঝতে পারে বৃদ্ধ আসলে বাগানের মালিক নয়, একজন মালি।সে রেগে বৃদ্ধার বাড়ি থেকে চলে যায়। তবে যাবার আগে তার কাছ থেকে অন্য একজনের ঠিকানা নিয়ে যায়।
ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে সাদেক ওই ব্যক্তির কাছে আপেল খাওয়ার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে সে এবং আশপাশের মানুষ অবাক হয়ে যায়। ওই লোকটি তখন সাদেককে বলে, 'একটি আপেলই তো খেয়েছ, কোন সমস্যা নেই। তুমি না খেলেও এটা নষ্ট হয়ে যেত।এখন পুরোটা খেয়ে ফেলো'।
সাদেক ওই লোকের কথা মতো পুরো আপেলটি খেয়ে ফেলে। খাবার পর বুঝতে পারে ওই লোকটি আসলে বাগানের মালিক নয়, তখন সাদেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর ওই ব্যক্তি সাদেককে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
৩.সালমা
সাদেককে ওই ভদ্রলোক যে বাড়িতে নিয়ে আসে সেটা আসলে সালমার বাড়ি। সালমা হচ্ছে ওই বিশাল বাগানের মালিক। সে শহরে বসবাস করে এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। কিছুদিন আগে তার পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য সে এই বাড়িতে এসেছে। একটি আপেল খাওয়ার জন্য একজন মানুষ এভাবে অনুতপ্ত হতে পারে এটা দেখে সালমা অবাক হয়ে যায় এবং হাসাহাসি করে। তবে সাদেককে সে এত সহজে ক্ষমা না করে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়। সাদেক তখন পড়ে যায় আরো বিপদে.....
মন্তব্য;
মুভিটি খুব অল্প বাজেটের একটি মুভি।মুভিতে অভিনয় করা চরিত্রের সংখ্যাও খুব বেশি না। তারপরও মুভিতে কিছু উপাদান আছে যার কারণে এটা বারবার দেখতে এটি আকর্ষণ করে। বারবার বললাম কারণ আমি মুভিটি ৩-৪ বার দেখেছি। ছবিটি ভালো লাগার অনেক কারণে মধ্যে কয়টি হলো;
এই মুভির মুভির কালার গ্রেডিং মধ্যে অদ্ভুত এক ভালো লাগার আবহ আছে...যা সাদাকালো না আবার খুব রঙ্গিন না। কেমন যেন ধূসর ধূসর। মুভি দেখার সময় যা অন্য এক জগতে নিয়ে যায়।
মুভির সিনেমাটোগ্রাফি খুবই ভালো ছিল। এর ক্যামেরার ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। অদ্ভুত রকম সুন্দর ভাবে ক্যামেরার ব্যবহার অবশ্য সব ইরানি মুভিতেই কম বেশি দেখা যায়।
মুভিটি ভালোলাগার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক...যা এক কথায় অসাধারণ। এরপর আছে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়।মুভির মূল চরিত্রে অভিনয় করা সাদেকের বিষয়ে আমি আগেই বলেছি, তার চরিত্রটি খুবই,শান্ত শিষ্ট এবং ভদ্র মানুষের। সাদেকের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা এসব কিছুই খুবই নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
সাদেকের আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা, চালচলন দেখে যেকোনো মানুষ তার মায়ায় পড়ে যাবে। মুভির নায়িকাও পড়েছে কিন্তু সেটা সে প্রকাশ করেনি... তবে বোঝা যায়। নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রীর অভিনয়ও ছিল খুবই ভালো।
আমার কাছে এই মুভিটি একটি শিক্ষনীয় মুভি।মুভি থেকে মূল শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে নৈতিকতা।যদিও প্রায় সব ইরানি মুভিতেই নৈতিকতার বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে এই মুভিতে আরো বেশি করে তা তুলে ধরা হয়েছে।আর এই জন্য সাদিকের চরিত্রটিকে একজন পরিপূর্ণ নীতিবান মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সাদেককে যে ব্যক্তি আহত করে সেই ব্যক্তিকে সে উল্টো পুরস্কৃত করে, সালমা তাকে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করতে বলে রাতে ফিরে এসে দেখে সাদেক তখনো কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেছে.. কারণ সালমা বলে যায়নি কতক্ষণ পর্যন্ত পড়তে হবে। কথা বলার সময় সাদেক কখনোই সালমার দিকে চোখ তুলে তাকাইনি, তাই সালমা এটা নিয়েও অভিযোগ করে 'কেন সে কথা বলার সময় মুখের দিকে তাকায় না'।
সাদেকের কাছে সুযোগ ছিল রাজকন্যা এবং রাজত্ব দুটোই নেওয়ার, কিন্তু সে কোনটি না নিয়ে কোরআন শরীফে এই আয়াতের উপর নির্ভর বলেছে:
"আল্লাহ কি তাঁর বান্দাদের জন্য যথেষ্ট নয়"
নোট; মুভিটা দেখার অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম যে মুভির ঘটনাটি বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী
( র:) পিতাকে নিয়ে। এটা সত্য বা মিথ্যা এটা যাচাই করতে পারেনি। তবে আমি বলতে পারি, মূল চরিত্রকে এই মুভিতে যথাযথ সম্মান এবং খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
দয়াকরে কমেন্টে স্পাম মেসেজ দেবেন না।