আমেরিকার খবরদারি ও মুসলমাদের মধ্যে বিভক্তি

একটা কথা প্রচলিত আছে এইরকম যে, একবার জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে তার এক সহকারী এসে বলল "স্যার আফগানিস্তানে আমাদের বোমা হামলায় ২০ জন বেসামরিক মানুষ এবং ৩-৪টি ভেড়া মারা গেছে"।এই কথা শুনে বুশ খুব অবাক এবং রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করল"ভেড়া কিভাবে মারা গেল"!!?

বুশ ভেড়া কিভাবে মারা গেল সেটা জিঙ্গেস করেছে,সে জিজ্ঞেস করেনি "এতো গুলো মুসলমান মারা গেল কিভাবে" সে এটাও জিগ্যেস করেনি " যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে কতজন শিয়া এবং কতজন সুন্নি মুসলিম ছিল।
সে জিজ্ঞেস করেনি কারণ তাদের কাছে মুসলমান মারা যাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার...কিন্তু ভেড়ার মৃত্যু তাদের কাছে খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার।

শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে তারা যে মুসলিম হত্যা করে চলছে তাদের কাছে 'মুসলিম হত্যা'টাই আসল বিষয়.. সেখানে কে শিয়া আর কে সুন্নি সেটা তাদের কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন।

তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও আমাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাছে মানে আমাদের মুসলমানদের কাছে। আমরা মুসলিমরা শিয়া মারা গেলে সুন্নিরা খুশি হই, আর সুন্নি মারা গেলে শিয়ারা খুশি হই।এই সুযোগটাই কাছে লাগায় পশ্চিমারা।

এই দুই সম্প্রদায়ের বিভক্তিকে আরো উসকে দিয়ে মুসলিমদের উপর তারা খুব সহজে কর্তৃত্ব বজায় রাখে। শিয়া-সুন্নি এই বিরোধটা সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে যতটা না প্রকট তার থেকে হাজার গুণ বেশি প্রকট ক্ষমতাশালী মুসলিম দেশের নেতাদের মধ্যে।

নিজকে সুন্নি গ্রুপের নেতা মনে করে সৌদি আরব আর শিয়া গ্রুপের নেতা ইরান।সুন্নি নেতা সৌদি তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এবং ইরানের চেয়ে শক্তিশালী হতে সব ধরনের চেষ্টা কাজ করে যাচ্ছে।সে ইয়েমেনে হাজার হাজার শিয়া মারতেছে নিজের শক্তি প্রদর্শনের জন্য,সেই সাথে পশ্চিমাদের খুশি করার জন্য ফিলিস্তিন ইসূতে সব সময় নিরব থেকে গোপনে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে..আর আমেরিকার পা চাটার কথা না হয় বাদই দিলাম।

পক্ষান্তরে শিয়া দেশ ইরান সম্পুর্ন উল্টো পন্থা অবলম্বন করে চলেছে।তারা আমেরিকা এবং ইসরাইলকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সবচেয়ে সবব দেশ হচ্ছে ইরান।তারাই মনে হয় একমাত্র দেশ যারা ফিলিস্তিনিদের আর্থিকসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে।

আর এটাই হচ্ছে তাদের জন্য কাল।তারা যদি সৌদিদের মতো আমেরিকা এবং ইসরাইলের পা চাটতো তাহলে তারা হয়ে যেত মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ।কারণ মুসলিম দেশ গুলোর মধ্যে তারাই সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত, জ্ঞানী এবং বিনয়ী জাতি।

ইরানের চারপাশে এখন আমেরিকা বোমারু বিমান এবং বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেছে।তারা এখন ইরানে হামলা চালানোর জন্য অজুহাত খুঁজতেছে।যে কোন একটা অজুহাত পেলেই আমেরিকা ইরানে হামলা চালাবে।মাঝখান দিয়ে তৃতীয় কোন শক্তি এই অজুহাত তৈরির কাজটি করে দিলেও অবাক হব না... এরপর যুদ্ধ..
অবশ্য তাতে আমাদের এতো চিন্তা করার কিছুই নেই!! আমারা তো সুন্নি। যুদ্ধ শুরু হলে আমরা সুন্নিরা পপকর্ন হাতে নিয়ে আল-জাজিরার সামনে বসে বসে শিয়াদের ধ্বংস দেখবো। কারণ তারা আমাদের কাছে মুসলমান না... তারা হচ্ছে শিয়া।

হামলার সুযোগ পেয়ে আমেরিকা আফগানিস্তান,
ইরাক,সিরিয়া, লিবিয়ার পর এবার ইরান ধ্বংস করে দিবে। ইরান ধ্বংসের পর মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার রাজত্বকরতে আর কোন বাধা থাকবে না।ইসরাইলেও আর কোন রাষ্ট্রকে তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করবে না।
ইরান ধ্বংস হয়ে গেলে মুসলমানদের স্বার্থ দেখুক বা না দেখুক মুসলমানদের নেতা হবার পথে সৌদি আরবের আর কেউ বাঁধা থাকবে না।

বলদ সৌদি আরব এবং সুন্নি মুসলমানরা কখনো বুঝবে না আমেরিকা শিয়া-সুন্নী মারে না। আমেরিকা মুসলমান মারে, তারা মুসলিম দেশ ধ্বংস করে।আর এইভাবে আফগানিস্তান, ইরান,ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ার পর হয়তো কোন একদিন আমেরিকার লিষ্টে সৌদি আরবের নামও চলে আসবে।

আর তখন আবারো আমরা পপকর্ন হাতে নিয়ে আল-জাজিরায় বসে বসে সৌদিদের মৃত্যু দেখবো এর বলবো 'সৌদিরা মরতেছে তাতে আমাদের কি!!আমরা তো ঠিকই আছি।এভাবে ধীরে ধীরে মুসলিম দেশ গুলো হয়ে যাবে এক একটি শরনার্থী শিবির।

তাতেও কোন সমস্যা নেই!!! সব মুসলমান মরে শেষ হয়ে যাক, তবুও শিয়াদের মুসলমান হিসেবে গন্য করা হবে না।😀😀

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.