keluarga cemara (2018)

দেশ: ইন্দোনেশিয়া
একটি মাস্ট ওয়াচ পারিবারিক ড্রামা মুভি

এই পৃথিবী যেমন স্থায়ী না।একই ভাবে পৃথিবীতে বসবাসরত মানুষগুলোও স্থায়ী না, মনে যে কোন সময় মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। ঠিক তেমনি মানুষের জীবন যাপনের সাথে সম্পর্কিত কোন কিছুই স্থায়ী না। ক্ষমতা স্থায়ী না আবার ক্ষমতাহীনতাও স্থায়ী না,সুখ স্থায়ী না আবার দুঃখটাও তেমনি ভাবে স্থায়ী না।অর্থ, বিত্ত স্থায়ী না, আবার দারিদ্র্যতাও স্থায়ী না।

সুসময় স্থায়ী না ঠিক তেমনি দুঃসময়টাও স্থায়ী না। যদিও দুঃসময়ের মূহুর্তগুলো আমাদের কাছে অনেক লম্বা মনে... শেষ হতে চায় না। কারণ এই দুঃসময়ে কেউ পাশে থাকতে চায়। দূর্বল বা অসহায়ের পাশে কেইবা থাকতে চায়।এক পরিবার ছাড়া আর কাউকে এইসময়ে খুঁজে পাওয়া যায় না।

কথাগুলো ইন্দোনেশিয়ার keluarga cemara (2018) মুভিটি দেখে মনে আসলো।দুই মেয়ে নিয়ে বাবা মায়ের খুব সুখী একটা পরিবার। পরিবারটি থাকে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার খুব অভিজাত এলাকায়। বিশাল বাড়ি আছে তাদের, আছে গাড়ি এবং আছে বেশ ভালো ব্যবসা।আর আছে সুখ এবং পরিবারের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন।

প্রতিদিনের মতো স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাবা তার দুই মেয়েকে সাথে নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। মেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে সে অফিস চলে আসে।আজ এই পরিবারের ছোট মেয়ের জম্মদিন,এই জন্য সন্ধ্যায় বাড়িতে অনেক অতিথি দাওয়াত করা হয়েছে।

ছোট মেয়ে তার বাবাকে স্কুলে যাওয়ার পথে বারবার মনে করিয়ে দেয়" বাবা তুমি কিন্তু আজকে সময় মতো বাসায় ফিরবা, কোনভাবেই যেন দেরী না হয়"। বাবা মেয়েকে কথা দেয় সে সময় মতো বাসায় ফিরবে।

বাড়িতে জম্মদিনের অনুষ্ঠান চলছে,সব অতিথি চলে এসেছে। ছোট মেয়েটি বারবার এদিকে সেদিন তাকাচ্ছে, কারন তার বাবা এখনও আসেনি। বাবা এখনও আসেনি কারণ বাবার অফিসে সমস্যা হয়েছে।সব শ্রমিক চলে এসেছে বকেয়া বেতন নেয়ার জন্য,তারা নাকি কয়েকমাস ধরে একটি প্রজেক্টর বেতন পাচ্ছে না।সে আরো কিছুদিন সময় চাচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকরা আর সময় দিতে নারাজ, তাদের টাকা আজকেই পরিশোধ করতে হবে।

এদিকে জম্নদিনের অনুষ্ঠান চলাকালে বাড়িতে ব্যাংকের লোক আসে।লোন পরিশোধ করতে না পারায় কোন সময় না দিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে অতিথিসহ ওই পরিবারকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে বাবা বাড়িতে এসে দেখে তার পরিবার তখন বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

সকালেও যেখানে পরিবারটির সবকিছু ঠিক ছিল কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে তাদের জায়গা হয় রাস্তায়। কোনমতে বাইরে একরাত থেকে তারা চলে যায় মেয়েদের দাদা বাড়ি জাভা দ্বীপে। সেখানে গিয়ে মেয়েদের খুব ছোট এবং সাধারণ একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে বাবা চাকুরীর জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে, কিন্তু সে চাকরি পায় না।

বাধ্য হয়ে সে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ নেয়। কিন্তু কথায় আছে না, বিপদ যখন আসে তখন চারপাশ দিয়ে আসে। একদিন কাজ করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় পারে তার পা ভেঙ্গে যায়। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিটিও ঘরে পরে যায়....

ওই যে আরেকটি কথায় আছে না, অভাব যখন সামনে দাঁড়ায় ভালোবাসা তখন জানলা দিয়ে পালায়।এই পরিবারের অবস্থাও কিছুটা সেরকম হয়, অভাবে কারণে একসময় পরিবারের ভালোবাসা এবং ঐক্যের মধ্যে চির ধরতে শুরু করে...

এরপর তারা কিভাবে জীবন যাপন করে??তারা কি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে?? জানতে হলে ইন্দোনেশিয়ার এই পারিবারিক মুভিটি দেখে ফেলুন। আমি বলবো মুভিটি অবশ্যই দেখা উচিৎ.. এবং এইধরনের মুভি আরও বেশি করে নির্মাণ করা উচিত। কারণ এইধরনের মুভি পারিবারিক মূল্যবোধ এবং পারিবারিক ঐক্যের শিক্ষা দেয়। আমাদের শিক্ষা দেয় যে কোন পরিস্থিতিতে হার না মানার,চরম বিপদের মূহুর্তেও পরিবারের পাশে থাকার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.