ভালোবাসা এক্সপ্রেস

কৌতুহলী হয়ে দেখা একটি দেখার অভিজ্ঞতা

১৪ই আগষ্ট ২০১৯, দুপুর- ২টা
সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, যদিও পরিকল্পনা ছিল আজকে বন্ধুদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাব। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বের হতে পারছিলাম না। তাই ড্রইংরুমে বসে বসে উদ্দেশ্যহীনভাবে টিভির চ্যানেল পরিবর্তন করছিলাম। একপর্যায়ে চোখ পড়ল "মোহনা টিভিতে"।
টিভিতে তখন বাংলা ছবি "ভালোবাসা এক্সপ্রেস" চলছিল (নামটি পরে জেনেছি)। আমিও কৌতুহলী মন নিয়ে দেখতে শুরু করলাম।

টিভি পর্দায় দেখলাম সমুদ্রতীর দিয়ে একটি মেয়ে দৌড়াচ্ছে।দৌড়াতে দৌড়াতে মেয়েটি দেখতে পেল সমুদ্রের বালুতে একটি কাঁচের বোতল পারে আছে এবং তার ভেতর চিঠি।মেয়েটি বোতল খুলতে গেলে তার সাথে থাকা অদ্ভুত রকম ভাবে ময়দার মেকআপ দিয়ে ফর্সা হওয়া লোকটি বলল," আফা খুইলেন না, ভেতরে কি না কি আছে"।

তবুও মেয়েটি বোতলের ভেতর থেকে চিঠিটি বের করে দেখলো তাতে লিখা আছে, "এই চিঠিটি যে পেয়েছ তাকে বলছি, তুর্যকে বলে দিও তার ভালোবাসার বন্যা এখন টাঙ্গাইলে আটকে আছে"। সাথে তূর্যর মোবাইল নাম্বার এবং ঢাকার ঠিকানা দেয়া।

"বোতল জাত চিঠি টাঙ্গাইল থেকে ভাসতে ভাসতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে চলে এসেছে"। এগুলো ভাবা যায়!!😀

যাইহোক,মেয়েটি চিঠিতে থাকা তূর্যর মোবাইল নাম্বারে ফোন দিল, কিন্তু মোবাইল বন্ধ। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল ঢাকায় গিয়ে তুর্যকে খুঁজে বের করে তার ভালোবাসার মানুষের বিপদের কথা জানাবে।

ঢাকা পৌঁছানোর সাথে সাথে তার গাড়ির সামনে একটি ঘটনা ঘটলো। সে দেখতে পেল একটি ছেলে এবং একটি মেয়েকে একদল গুন্ডা তাড়া করছে।ছেলেটিকে ধরে গুন্ডারা সর্বনাশ করে দিবে... মানে ন্যাড়া করে দিবে।

মেয়েটি বাধা দিতে গেলে পাশ থেকে এক লোক বলল, 'যাইয়েন না আপা, তার নাম কাটা শামসু।সে দিনে দুপুরে মানুষ খুন করে ফেলে।মেয়েটি বলল, "তাই বলে একটি ছেলেকে সবার সামনে ন্যাড়া করে দিবে আর কেউ কিছু বলবেনা,এই শহরে প্রতিবাদ করার কেউ নেই"??😀😀

ঠিক তখন কোন দূর অজানা থেকে গায়েবী এক আওয়াজ ভেসে এলো, "আছে, নাম তার রেড"😂😂

পরমুহূর্তেই আজব এবং হাস্যকর ভাবে
দলবল নিয়ে সুপার হিরো শাকিব খান এবং কৌতুকে অস্কার পাওয়া আফজাল শরীফের পর্দায় আগমন ঘটল। সুপার হিরো শাকিব খান কিছু অস্বাভাবিক এবং অদ্ভুত মারামারির মাধ্যমে গুন্ডা দলকে মেরে ছেলেটিকে সর্বনাশের হাত থেকে.. মানে ন্যাড়া হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিল।

ঢাকা যাওয়া মেয়েটি ভাবলো এর মাধ্যমেই সে তুর্যকে খুঁজে বের করতে পারবে (আসলে এই রেড বা সুপার হিরো শাকিব খান'ই তূর্য 😀)। মেয়েটি তুর্যর বাড়িতে প্রবেশ করলো। যেহেতু তূর্যর বাড়িতে রান্না করার কেউ নেই সুতরাং সে রান্না করে তুর্যকে খাওয়ালো। তুর্য মেয়েটির উপর অত্যান্ত খুশি হলো।

মেয়েটি তখন সুপার হিরোকে বলল, "আমি তোমাকে ভালোবাসার সুযোগ চাই, আমি তোমার ভালোবাসা পেতে চাই😂

সুপারহিরো তখন মেয়েটিকে বলল, "দেবো, আমি তোমাকে ভালোবাসা দিবো😁.....এরপর শুরু হলো গান।

না, এত তাড়াতাড়ি ভালোবাসা হয়ে যায় নাই। তুর্যর তো ভালোবাসার মানুষ আছেই,ওই যে বন্যা,যার বোতলে ভরা চিঠি টাঙ্গাইল থেকে ভেসে ভেসে কক্সবাজার গিয়ে থেমেছে।

এই ভালোবাসা এবং গান ছিল মেয়েটির কল্পনা। আসলে রান্না করার কারণে মেয়েটির উপর তুর্য রেগে যায়। মেয়েটি তখন আফজাল শরীফকে জিজ্ঞেস করে, "সে (তুর্য) এমন কেন"?আফজাল শরীফ তখন তুর্যর খারাপ হয়ে যাওয়ার ঘটনা বলতে শুরু করে।

অনেকদিন আগে তুর্য চাকরির ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য বের হচ্ছিল। তার ইন্টারভিউ ছিল দুপুর ১২ টায়, তুর্যর মা তুর্যকে কসম দিয়ে বলে, "বল বাবা তুই ১২টার আগে কোন মারামারি করবি না"।তুর্য তার মাকে কথা দেয় সে ১২টার আগে কোন মারামারি করবে না।

কিন্তু ইন্টারভিউতে যাবার পথে আফজাল শরীফকে বাঁচাতে গিয়ে সে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে।সে যেহেতু তার মাকে কথা দিয়ে এসেছে সে ১২ টার আগে কোনো মারামারি করবে না, তাই সে মার খেতে থাকলেও কারো গায়ে হাত দিচ্ছিল না।যখনই এক মোটকা গুন্ডা তুর্যর পেটে চাকু ঢুকিয়ে দিতে আসছিল ঠিক সেই মুহূর্তে কোন এক অজানা জায়গার বিল্ডিং থেকে শব্দ করে ১২টা বাজার ঘন্টা বেজে উঠল।

তূর্য তখন গুন্ডাদের বলল, "মাকে কথা দিয়েছিলাম ১২টার আগে কোন মারামারি করবো না। এখন ১২টা বেজে গেছে, তোদের এখন ১২ বাজাবো"। এই বলে সে এক ধাক্কায় ১০-১২ জনকে উঁচু করে এদিক সেদিক ফেলে দিল এবং সবাইকে সুপার হিরো কায়দায় বেধড়ক পেটালো।

ওহ্ আরেকটি মজার ঘটনা বলি, তুর্যকে মারার মুহূর্তে প্রাধান গুন্ডা একটি সিগারেট জ্বালানোর জন্য অনেক চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু সে কোনভাবেই কাঠিতে আগুন ধরাতে পারছিল না,তুর্য গুন্ডার হাত থেকে কাঠিটা নিয়ে তার হাতে থাকা রক্তের মধ্যে সেটা ঘষা দিয়ে আগুন ধরিয়ে সেটা দিয়ে গুন্ডার সিগারেট জ্বালিয়ে দেয়।গুন্ডা তো পুরাই অবাক হয়ে যায়... আমিও অবাক হয়ে যাই।

যাইহোক, বিনোদনের নামে এই অত্যাচার আমাকে আর বেশিক্ষণ সহ্য করতে হলো না। আল্লাহ অশেষ রহমতে বৃষ্টি এরইমধ্যে থেমে গেছে। তাই আমাকে এখন বের হতে হবে। তবে যাবার আগে মুভি সম্পর্কে কিছু কথা বলে যাই:

🔴মন্তব্য; মুভির ভিজুয়াল ইফেক্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, ভয়েস, ক্যামেরা, ক্যামেরার ব্যবহার দেখে আমার মনে হয়েছে এর থেকে বর্তমানে চরম দুঃসময়ে থাকা বাংলা নাটকের মানও অনেক অনেক ভালো।

গল্পের কথা না বলাই ভালো। কারণ এটা কোন গল্পের মধ্যেই পড়ে না।ছোটবেলায় আব্বুর সাথে এলাকার বাজার গেলে সেখান থেকে ৫ টাকার গল্পের বই কিনে আনতাম।এই বইয়ের মধ্যে একাধিক গল্প থাকত, যা এই মুভির গল্পের থেকে হাজারগুন ভালো।

ড্রেস আপ এবং মেকাপের কথা কি আর বলবো, এগুলোর সাথে যাত্রা পালার মেকাপ এবং ড্রেস আপের অনেকাংশে মিল আছে।

অভিনয়ের কথা বলতে গেলে ছবিতে যারা অভিনয় করেছে কম বেশি সবাই অতি অভিনয় করেছে, দেখেই বুঝা যায় তার অভিনয় করছে।এই অতি অভিনয়ের শীর্ষে আছে কৌতুক অভিনেতা আফজাল শরীফ।

উনি যে চরিত্রে অভিনয় করে উনার বয়সের সাথে এই চরিত্র কোনভাবেই যায় না। সে মাত্রা অতিরিক্ত অতি অভিনয় করে এবং জোর করে হাসানোর চেষ্টা করে, যা দেখে হাসির পরিবর্তে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।জোর করে হাসানোর চেষ্টা সুপার হিরো শাকিব খানও করে,যা খুবই বিরক্তিকর।

শেষ কথা হচ্ছে, মূল ধারার বাণিজ্যিক বাংলা ছবির মান উন্নয়নের জন্য সবার আগে মুভির সাথে সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের রুচির বড় ধরনের পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে এরকম জঘন্য নিম্নমানের যাত্রা পালার মত মুভি নির্মাণ হতেই থাকবে এবং একটা শ্রেণি ছাড়া অন্য সাধারণ মানুষ কখনো হলমুখী হবে না।
Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.