🔴নির্বাচনের একাল-সেকাল;-
আগে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই দেখতাম ভোটার, প্রার্থী এবং কর্মী সবার মাঝেই একটা উৎসব উৎসব ভাব। ঠিক যেন ঈদের মতো। তখন প্রায় কাছাকাছি বড় দুই দলের দুটি বড় নির্বাচনী ক্যাম্প থাকত। এলাকার চায়ের দোকানে চা থাকত ফ্রি...যে যত পান করতে পারে।কোন বাধা নিষেধ ছিল না। সিগারেটটাও প্রায় এভাবেই বিতরণ করা হত।
আমি আগে থেকেই চা বা সিগারেট কোনটাই খাইনা। কিন্তু আমার বন্ধুদের দেখতাম অগনিত কাপ চা এবং অনেক সিগারেট নিতে।যারা খেত না তারা সিগারেট নিয়ে সেই সিগারেট পাশের দোকানে বিক্রি করে দিত। তবে ফ্রি সিগারেট পাওয়ায় ঐ সময়ে অনেক কম বয়সী নতুন সিগারেটখোরের জন্ম হতো (এখনো হয়)। তখন নির্বাচনের আলোচনার মুল কেন্দ্র-বিন্দু ছিল চায়ের দোকানগুলোতে, যেখানে অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রেখে জমজমাট আড্ডা চলতো।
আমরা তখন দলবেঁধে কোন প্রার্থীর দ্বায়িত্বশীল লোকের কাছে গিয়ে বিভিন্ন কথা বলে নগদ টাকা আনতাম। এভাবে আমরা গোপনে দুই দলের কাছ থেকেই টাকা নিতাম। আমার মনে আছে সেই টাকা দিয়ে আমারা ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম, ফুটবল এবং ক্যারাম বোর্ড কিনেছিলাম বা অনেক সময় টাকা ভাগাভাগি করে নিতাম। যদিও তখন আমাদের অনেকের ভোটই ছিল না।
তখন উভয় দলের প্রচার প্রচারণা ছিল প্রায় সমান সমান। প্রচারণার ক্ষেত্রে কোন ভয়-ভিতী ছিল না এবং এ নিয়ে কখনো কোন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিলো বলে আমার মনে পড়ে না । তবে আমাদের এলাকাটা যেহেতু একটি বিএনপি প্রধান এলাকা তাই অন্য দলের কর্মীর সংখ্যা ছিল খুব সামান্য। নির্বাচনের অনেক দিন আগে থেকেই উভয় দলের পোষ্টার ব্যানার দিয়ে এলাকার ছেয়ে যেত। প্রতিদিন দিন মাইকিং হতো, কয়েকদিন পর পর দল বেঁধে মানুষের বাড়িতে গিয়ে জনসংযোগ বা ভোট চাওয়া হতো।
নির্বাচনের আগের বা তার আগের দিন উভয় দলের কর্মীরা সবার বাড়িতে গিয়ে ভোটার লিস্ট দেখে কে কত নাম্বার ভোটার তার স্লিপ দিয়ে আসতো।আর কিছুক্ষণ পরেই ভোট কিন্তু এখনো কোনো দল ঐরকম স্লিপ দিয়ে যায়নি। তখন নির্বাচনের দু-একদিন আগে থেকে স্ব স্ব দলের লোকজন এলাকায় সারা রাত পাহারা দিত, কেউ ভোটারদের টাকা দেয় কিনা সেটা দেখার জন্য।
নির্বাচন এখন হচ্ছে, অথচ নেই কোন উৎসব, নেই কোন আমেজ, নেই কোন মাইকিং, নেই চায়ের দোকানে সেই আড্ডা কারণ মানুষ এখন রাজনৈতিক কথা বলতে ভয় পায়,একটু রাত হলে এলাকায় নেমে আসে ভৌতিক নিরবতা। নেই কোন জনসংযোগ বা বাড়িতে গিয়ে ভোট চাওয়া দৃশ্য ( সরকারি দলকে আমি আমাদের বাসায় একদিন আসতে দেখেছি আর প্রতিপক্ষকে চোঁখেই দেখিনি)।
আছে শুধু ভয়-ভীতি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং হয়রানি। এখন প্রতিপক্ষ প্রচারণা করা তো অনেক দূরের কথা, তারা বাড়িতেই থাকতে পারে না। তারা পোলিং এজেন্ট খুঁজে পায় না,তারা পোস্টার-ব্যানার লাগাতে সাহস পায় না। এমনকি সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ভয়ে রাতে বাইরে বের হতে পারে না।ভয়ে ফেসবুকে কিছু লিখা যায় না। ইন্টারনেটের স্পিড কমিয়ে দেয়া এবং আরো নানা ধরনের বাধা নিষেধ নির্বাচনী এই উৎসবকে এখন ভয়ে রূপান্তর করেছে।
প্রতিপক্ষের উপর সরকারি দলের এই যে অন্যায় আচরণ এটা কিন্তু অস্বাভাবিক না, বরং স্বাভাবিক। কারণ তারা তো ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেই, আর সেই জন্যই তারা প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হবে। প্রতিপক্ষকে তো এতোটুকু হয়রানি মেনে নিয়েই মাঠে থাকতে হবে। এই দেশের প্রতিপক্ষ ক্ষমতায় গিয়ে দেশ লুটেপুটে খেতে রাজি আছে.... কিন্তু মাঠে গিয়ে কষ্ট করতে রাজি নয়।এটা একটা অদ্ভুত দল... খাওয়া সময় নেতা কর্মীদের অভাব হয় না, কাজের সময় কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।আমাদের এলাকার পরিস্থিতি দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই এখানে বিএনপি নামক কোন দলের অস্তিত্ব আছে। কোন পোস্টার নেই, কোন কর্মী নেই, কোন এজেন্ট নেই।এই দলের পদ প্রাপ্ত নেতারা ভোট দিতে আসবেন কিনা তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।অথচ এটা একটা বিএনপি প্রধান এলাকা।সুতরাং সরকারি দলের আমি খুব বেশি দোষ দেখি না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে এমনটা হচ্ছে বিষয়টি কিন্তু তা না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও প্রতিপক্ষের উপর একই আচরণ করত। কারণ আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিটাই এই রকম। কোন রাজনৈতিক দলই দেশের কথা চিন্তা করে না, গনতন্ত্রের কথা চিন্তা করে না, দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে না। তারা চিন্তা করে কিভাবে দেশটাকে আরো ভালো ভাবে লুটে-পুটে খাওয়া যাবে। তারা চিন্তা করে কিভাবে তাদের ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করা যাবে, যাতে কখনোই এই ক্ষমতা ছেড়ে আর যেতে না হয়।
আমি কোন রাজনৈতিক দল করি না। তবে এই রকম রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচনী পরিবেশ দেখে দেশ এবং গনতন্ত্রের কথা ভেবে খুব শংকিত হই।
নোট;দলীয় সরকারের অধীনে কখনো এবং কোনদিনই এই দেশে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সেটা যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন।
আগে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই দেখতাম ভোটার, প্রার্থী এবং কর্মী সবার মাঝেই একটা উৎসব উৎসব ভাব। ঠিক যেন ঈদের মতো। তখন প্রায় কাছাকাছি বড় দুই দলের দুটি বড় নির্বাচনী ক্যাম্প থাকত। এলাকার চায়ের দোকানে চা থাকত ফ্রি...যে যত পান করতে পারে।কোন বাধা নিষেধ ছিল না। সিগারেটটাও প্রায় এভাবেই বিতরণ করা হত।
আমি আগে থেকেই চা বা সিগারেট কোনটাই খাইনা। কিন্তু আমার বন্ধুদের দেখতাম অগনিত কাপ চা এবং অনেক সিগারেট নিতে।যারা খেত না তারা সিগারেট নিয়ে সেই সিগারেট পাশের দোকানে বিক্রি করে দিত। তবে ফ্রি সিগারেট পাওয়ায় ঐ সময়ে অনেক কম বয়সী নতুন সিগারেটখোরের জন্ম হতো (এখনো হয়)। তখন নির্বাচনের আলোচনার মুল কেন্দ্র-বিন্দু ছিল চায়ের দোকানগুলোতে, যেখানে অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রেখে জমজমাট আড্ডা চলতো।
আমরা তখন দলবেঁধে কোন প্রার্থীর দ্বায়িত্বশীল লোকের কাছে গিয়ে বিভিন্ন কথা বলে নগদ টাকা আনতাম। এভাবে আমরা গোপনে দুই দলের কাছ থেকেই টাকা নিতাম। আমার মনে আছে সেই টাকা দিয়ে আমারা ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম, ফুটবল এবং ক্যারাম বোর্ড কিনেছিলাম বা অনেক সময় টাকা ভাগাভাগি করে নিতাম। যদিও তখন আমাদের অনেকের ভোটই ছিল না।
তখন উভয় দলের প্রচার প্রচারণা ছিল প্রায় সমান সমান। প্রচারণার ক্ষেত্রে কোন ভয়-ভিতী ছিল না এবং এ নিয়ে কখনো কোন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিলো বলে আমার মনে পড়ে না । তবে আমাদের এলাকাটা যেহেতু একটি বিএনপি প্রধান এলাকা তাই অন্য দলের কর্মীর সংখ্যা ছিল খুব সামান্য। নির্বাচনের অনেক দিন আগে থেকেই উভয় দলের পোষ্টার ব্যানার দিয়ে এলাকার ছেয়ে যেত। প্রতিদিন দিন মাইকিং হতো, কয়েকদিন পর পর দল বেঁধে মানুষের বাড়িতে গিয়ে জনসংযোগ বা ভোট চাওয়া হতো।
নির্বাচনের আগের বা তার আগের দিন উভয় দলের কর্মীরা সবার বাড়িতে গিয়ে ভোটার লিস্ট দেখে কে কত নাম্বার ভোটার তার স্লিপ দিয়ে আসতো।আর কিছুক্ষণ পরেই ভোট কিন্তু এখনো কোনো দল ঐরকম স্লিপ দিয়ে যায়নি। তখন নির্বাচনের দু-একদিন আগে থেকে স্ব স্ব দলের লোকজন এলাকায় সারা রাত পাহারা দিত, কেউ ভোটারদের টাকা দেয় কিনা সেটা দেখার জন্য।
নির্বাচন এখন হচ্ছে, অথচ নেই কোন উৎসব, নেই কোন আমেজ, নেই কোন মাইকিং, নেই চায়ের দোকানে সেই আড্ডা কারণ মানুষ এখন রাজনৈতিক কথা বলতে ভয় পায়,একটু রাত হলে এলাকায় নেমে আসে ভৌতিক নিরবতা। নেই কোন জনসংযোগ বা বাড়িতে গিয়ে ভোট চাওয়া দৃশ্য ( সরকারি দলকে আমি আমাদের বাসায় একদিন আসতে দেখেছি আর প্রতিপক্ষকে চোঁখেই দেখিনি)।
আছে শুধু ভয়-ভীতি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং হয়রানি। এখন প্রতিপক্ষ প্রচারণা করা তো অনেক দূরের কথা, তারা বাড়িতেই থাকতে পারে না। তারা পোলিং এজেন্ট খুঁজে পায় না,তারা পোস্টার-ব্যানার লাগাতে সাহস পায় না। এমনকি সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ভয়ে রাতে বাইরে বের হতে পারে না।ভয়ে ফেসবুকে কিছু লিখা যায় না। ইন্টারনেটের স্পিড কমিয়ে দেয়া এবং আরো নানা ধরনের বাধা নিষেধ নির্বাচনী এই উৎসবকে এখন ভয়ে রূপান্তর করেছে।
প্রতিপক্ষের উপর সরকারি দলের এই যে অন্যায় আচরণ এটা কিন্তু অস্বাভাবিক না, বরং স্বাভাবিক। কারণ তারা তো ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেই, আর সেই জন্যই তারা প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হবে। প্রতিপক্ষকে তো এতোটুকু হয়রানি মেনে নিয়েই মাঠে থাকতে হবে। এই দেশের প্রতিপক্ষ ক্ষমতায় গিয়ে দেশ লুটেপুটে খেতে রাজি আছে.... কিন্তু মাঠে গিয়ে কষ্ট করতে রাজি নয়।এটা একটা অদ্ভুত দল... খাওয়া সময় নেতা কর্মীদের অভাব হয় না, কাজের সময় কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।আমাদের এলাকার পরিস্থিতি দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই এখানে বিএনপি নামক কোন দলের অস্তিত্ব আছে। কোন পোস্টার নেই, কোন কর্মী নেই, কোন এজেন্ট নেই।এই দলের পদ প্রাপ্ত নেতারা ভোট দিতে আসবেন কিনা তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।অথচ এটা একটা বিএনপি প্রধান এলাকা।সুতরাং সরকারি দলের আমি খুব বেশি দোষ দেখি না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে এমনটা হচ্ছে বিষয়টি কিন্তু তা না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও প্রতিপক্ষের উপর একই আচরণ করত। কারণ আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিটাই এই রকম। কোন রাজনৈতিক দলই দেশের কথা চিন্তা করে না, গনতন্ত্রের কথা চিন্তা করে না, দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে না। তারা চিন্তা করে কিভাবে দেশটাকে আরো ভালো ভাবে লুটে-পুটে খাওয়া যাবে। তারা চিন্তা করে কিভাবে তাদের ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করা যাবে, যাতে কখনোই এই ক্ষমতা ছেড়ে আর যেতে না হয়।
আমি কোন রাজনৈতিক দল করি না। তবে এই রকম রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচনী পরিবেশ দেখে দেশ এবং গনতন্ত্রের কথা ভেবে খুব শংকিত হই।
নোট;দলীয় সরকারের অধীনে কখনো এবং কোনদিনই এই দেশে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সেটা যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন।
দয়াকরে কমেন্টে স্পাম মেসেজ দেবেন না।