আমার স্মৃতিমালা -৩ (মডেম ভাঙ্গা)

২০০৯ সালে বাসায় ব্রডব্যান্ড ছিল না,3G তো তখন ছিলই না।ছিল ২জি, কিন্তু সেটার নেটওয়ার্ক রুমে পেলেও তা দিয়ে কোন ভাবেই রুমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যেত না।এই জন্য অসংখ্য বার আমি জিপিতে ইমেইল এবং ফোন করে অভিযোগ করেছি।

যেহেতু রুমে নেটওয়ার্কের সমস্যা ছিল তাই ভালো নেটওয়ার্কের জন্য CPU আমার রুমের উত্তরের জানালার একদম কাছে রাখতাম,প্রায় ওয়াল ঘেঁষে। জানালা খোলা রেখে মডেম CPU র পিছনে সংযোগ দিলে ফুল নেটওয়ার্ক পাওয়া যেত।

নেটওয়ার্ক ফুল থাকলেও আবার ফুল স্পীড সব সময় পাওয়া যেত না।এই জন্য মাঝে মাঝে CPU র সাথে যুদ্ধ করতে হতো...বারবার ডিসকানেক্ট করে আবার কানেক্ট করা, মডেম খুলে আবার লাগানো.... ইত্যাদি।

তখন আমি জিপির দুটি প্যাকেজ চালাতাম। একটি সারাদিন, অন্যটি রাত ১২ থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত আনলিমিটেড (৫ জিবির পর ফেয়ার ইউজ পলিসি)। যেটা দিয়ে মূলত তখন মুভি ডাউনলোড করতাম।

সব কিছু ঠিক থাকলে রাত ১২ টা থেকে সকাল ১০ টার মধ্যে একটি মুভি ডাউনলোড হতো। অনেক সময় ৯০ শতাংশ বা তার বেশি ডাউনলোড হবার পর বিদ্যুৎ চলে যেত। সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন এরকম দেখতাম তখন যে কেমন লাগতো। কারণ একেতো ডাটা লিমিটেড তার ওপর আবার নতুন করে ডাউনলোড করার জন্য একদিন অপেক্ষা করতে হতো।

শীতের সময়ে ডাউনলোডের এই ঝামেলা করতে খুবই কষ্ট হতো।যেহেতু উত্তরের জানলা খোলা রাখতে হতো,সেই খোলা জানালার পর্দা ভেদ করে হু.. হু করে ঠান্ডা বাতাস রুমে প্রবেশ করতো। আমি তখন প্রচন্ড শীতের মধ্যে জানালা বরাবর চেয়ারে বসে মুভি খুঁজতে থাকতাম...প্রচন্ড শীতে মাউস ধরা হাতটি জমে যাওয়ার মতো অবস্থা হতো।

আমি মুভি ডাউনলোড দিয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়তাম। এরপর সারারাত উত্তরের জানালা দিয়ে হিমালয়ের হিমশীতল বাতাস আমার রুমে বয়ে যেত।এগুলো অবশ্য আমি টের পেতাম না কারণ আমি তখন লেপের নিচে।

এইরকম এক শীতের রাতের ঘটনা।আমি বারবার ইন্টারনেট কানেক্ট করার চেষ্টা করতেছি কিন্তু কানেক্ট হলেও পর মূহুর্তেই আবার ডিসকানেক্ট হয়ে যাচ্ছে।আবার অনেক সময় স্পিড আসছে  4-5 KB।

ধীরে ধীরে মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। ওদিকে রাতেও প্রায় ২-৩টা বেজে যাচ্ছে... সেই সাথে আম্মার আমার রুমে রেড দেওয়ার সময়ও চলে এসেছে, 'আমি এখনো ঘুমায়নি কেনো সেই জন্য'।

অনেক চেষ্টার পরও যখন সবকিছু ঠিক হচ্ছিল না, তখন আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারলাম না।চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে CPU র সামনে খুব জোড়ে একটি লাথি দিলাম। লাথি দেয়ার সাথে সাথে CPU সামনের এলইডি লাইট ভেঙে ভেতরে চলে গেল।🙂

'এটা অবশ্য অত বড় সমস্যা না'... বুঝতে পারলাম অন্য জায়গায় আমি ঠিকই মারা খাইছি।

আমার লাথি দেয়ার সাথে সাথে CPU টি তার পিছনে থাকা মডেমসহ তীব্রগতিতে পিছনের ওয়ালে গিয়ে ধাক্কা খেলো।তখন আমার বুঝতে আর বাকি রইল না কি হয়েছে।আল্লাহর কাছে মনে মনে বললাম সেটা যেন না হয়।

দুরু দুরু বুকে CPU র পিছনে যেয়ে দেখি আমার নতুন কেনা ৪০০০ টাকার মডেমটি দুই ভাগে বিভক্ত।

একটি রাগ, একটি লাথি, একটি ৪০০০ টাকার নতুন মডেল মুহূর্তেই শেষ.... কিন্তু গ্রামীণফোনের কি তাতে কিছু এসে গেল??ধরা তো আমিই খাইলাম।

এটিই ছিল আমার ২০০৯ এর একটি শিক্ষামূলক স্মৃতি....

☑️ সারমর্ম : নিজেরে রাগ অন্য কিছুর উপরে ঝেড়ে কোন লাভ নেই... রাগ পড়ে গেলে বোঝা যায় ক্ষতিটা আসলে কার হয়েছে।

#আমার_স্মৃতিমালা -৩

#10YearsChallenge

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.