মজার এবং প্রায় ভয়ংকর ঘটনা

6.3.2019
17:00

গতকাল বিকেলের একটি ঘটনা বলি। খুব ছোট এবং অতি সাধারণ একটি মজার ঘটনা। তবে এটা খুব বড় এবং ভয়ংকর ঘটনাও হয়ে যেতে পারতো।

প্রায় প্রতিদিনের মতো বিকেলে হাঁটতে বের হয়ে নতুন তৈরি হওয়া একটি ব্রিজের রেলিংয়ের উপর গিয়ে বসলাম। সাধারণত রেলিংয়ের উপর বসলেই ভয়ে আমার শরীর কাঁপে। ব্রিজটি বেশ উঁচু, মাটি থেকে এর উচ্চতা ২৫-৩০ ফুট তো হবার কথাই। ব্রীজের নীচে পানি আছে খুবই সামান্য... যেটা না থাকার মতোই।

"আজকে হঠাৎ মনে হলো রেলিংয়ের উপর দাঁড়িয়ে দুহাত উপর দিকে দিয়ে নায়কের মতো করে ছবি তুলবো"।

বন্ধুদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে আমি জীবনে প্রথমবারের মতো কোন ব্রিজের রেলিংয়ের উপর দাঁড়ালাম এবং একটু হাঁটলামও।

রোদ, পেছনে সাদা আকাশ এবং নীচ থেকে ছবি তুলার কারনে ছবি ভালো আসছিলো না,তাই নীচে নেমে পড়লাম। 🔸(১ নং ছবি দ্রষ্টব্য)

নীচে নামার পর সামনে তাকিয়ে দেখি 'ব্রীজের নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু নদীর উপর একটি গাছের মতো কিছু ফেলে চলাচলের জন্য নদীর দুই তীরকে একত্রিত করা হয়েছে।

দৃশ্যটি দেখে আমার কোরিয়ান "Daisy" মুভির কথা মনে পড়ে গেল।

Daisy মুভি যারা দেখেছেন তাদের অবশ্যই মনে থাকার কথা, মুভির নায়িকা এইরকম সরু নদীর উপর রাখা গাছের ব্রীজ পার হয়ে অন্য পাড় যায় ছবি আঁকাতে। একদিন ওই গাছের সরু ব্রীজ পার হতে গিয়ে নীচে পানিতে পড়ে যায়.... এবং তার ছবি আঁকার উপকরণ সহ ব্যাগটি নদীতে ভেসে যায়।

প্রতিদিনের মতো দূরে বসে মুভির নায়ক এই দৃশ্য গুলো অবলোকন করে এবং পরে নায়িকার ভেসে যাওয়া ব্যাগটি সে পানি থেকে তুলে আনে। এরপর নায়ক ওই গাছের জায়গায় একটি ব্রীজ তৈরি করে সেখানে নায়িকার হারিয়ে যাওয়া ব্যাগ রেখে আসে।

এই রকম আরো অনেক মুভিতে দেখেছি, যেখানে নায়ক-নায়িকা এইরকম গাছের উপর পা ঝুলিয়ে বসে থাকে, আর তাদের নীচ দিয়ে পা ছুঁয় ছুঁই করে বয়ে যায় খুব সুন্দর আঁকাবাঁকা নদী।

যাইহোক, আমি অবশ্য মুভির গল্প বলার জন্য এই লেখা লিখছি না...লিখছি আমার গল্প বলার জন্য।

মুল ঘটনায় ফিরে যাই, আমার সাথে কোন নায়িকা না থাকলেও হঠাৎ মাথায় ভূত চাপল ওই গাছের উপর পা ঝুলিয়ে বসে ছবি তুলার।সিনেমেটিক দৃশ্য.... সুতরাং সেই রকম সুন্দর একটি ছবি হবে।

ব্রীজ থেকে নীচে নেমে ঐ জায়গায় যেয়ে দেখি ওখানে একটি পাইপ রাখা। ছবি তুলবে এক ছোট ভাই, ওকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে আমি 'সাবধানের মার নেই' তাই মোবাইলটা Imrul Tipu কাছে দিয়ে জুতা রেখে এক'পা- দু'পা করে পাইপের মাঝে গিয়ে আস্তে আস্তে বসলাম এবং এর সাথে সাথেই পাইপ কেঁপে উঠলো।

সেই সাথে আমার শরীর দুলতে দুলতে একটু সামনের ঝুকে গেল.. আমি ব্যালেন্স রাখতে পারছিলাম না। নীচের দিকে পড়ে যাচ্ছিলাম।পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে দুই হাত দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম পাইপ ধরে রাখার জন্য, কিন্তু পাইপ মোটা হওয়ায় সেটা পারিনি। যার ফলস্বরূপ 'ধুম করে নিচে পানিতে পড়ে যাই"😞
⏺️(৩,৪ নং ছবি দ্রষ্টব্য)

পানি ছিলো কোমড় পর্যন্ত।আশেপাশের মানুষজন দেখে ফেলে কিনা এই ভয়ে আমি দ্রুত উঠার চেষ্টা করি।আর অন্যদিকে আমার সাথে থাকা পোলাপান, কেউ দেখতেছে, কেউ হাসতেছে, আবার কেউ ভিডিও করতে পারিনি বলে আফসোস করতেছে।😟

ঘটনা কিন্তু বেশ মজার। কিন্তু এই মজার ঘটনা দূর্ঘটনায়ও পরিনত হতে পারতো। কারণ সাধারণত এইরকম সরু জলধারায় মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন বাঁশ বা খুঁটি পড়ে থাকে।যা দিয়ে আমি মারাত্মক রকম আহত হতে পারতাম।

ঘটনা এর থেকেও ভয়ঙ্কর হতে পরতো, যদি এখান থেকে না পড়ে পিছনের ৩০ ফিট উঁচু ব্রীজের রেলিং থেকে পরে যেতাম।

পড়তেই পারতাম,পা ফসকিয়ে বা শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে।আর এখান থেকে পড়লে এতোক্ষণে নিশ্চিত উপরে চলে যেতাম।😕

* পড়ে যাওয়ার পর উপরে উঠে একটু রেস্ট নিয়ে চিন্তা করলাম ছবি তুলতে এসে যখন ভিজেছি তখন ছবি তুলেই যাবো। এরপর আবারও ওই পাইপে গিয়ে বসে কয়েকটি ছবি তুলে ভিজে শরীরে বাসায় ফিরে আসলাম। ⏺️ (২ নং ছবি দ্রষ্টব্য)

🔴শিক্ষা;
🔼ছবি তুলতে গিয়ে পড়ে গেল বা আহত হলে কেউ সমব্যাথী হয় না।সবাই মজা নেয় এবং হাসাহাসি করে। কাছে মানুষ হলেও না।

🔼একটি ছবি আর কিছু লাইকের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।তাই ছবি তোলার জন্য বিভিন্ন রকম এক্সপেরিমেন্ট করতে যাওয়ার আগে সর্তকতা অবলম্বন করা খুবই প্রয়োজন।

📛জেনে রাখা ভালো; এই সরু জলধারাটির নাম "রক্তিম বিল" যেটা আসলে বংশী নদীর একটি শাখা। কয়েকবছর আগেও এখন দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মানুষ সাভার যেত। সময়ের ব্যবধান, সরকারের উদাসীনতা, মানুষের লোভ এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে এটি এখন একটি মৃত নদী। এখানে শুষ্ক মৌসুমে মানুষ এখন ধান রোপন করে।অবশ্য এর মূল নদী বংশী'র অবস্থাও প্রায় মৃত এবং মারাত্মক দূষিত।












একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.