একটি ব্লগ অথবা স্ট্রিট ফুড রিভিউ

২২ই জুন ২০১৯ ইং বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা
ছোট একটি কাজ শেষ করে বন্ধু রনির রেস্টুরেন্টেে এসে বসলাম।এই রেস্টুরেন্ট সুপার মেডিকেলের ঠিক বিপরীত দিকে। এখানে আসার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, এই গরমে একটু স্বস্তি পেতে এসির বাতাস খাওয়া এবং সেই সাথে ফ্রি'তে ওয়াইফাই তো আছেই
রনি এসে ওর রেস্টুরেন্টের চা খাওয়ালো।যদিও আমি চা খাই না, খাই না মানে একেবারেই খাই না।গত এক দেড় বছরের মধ্যে সম্ভবত এটাই আমার প্রথম চা খাওয়া বা পান করা।তাই বাধ্য হয়ে খেতে হয়েছে।এই চা এবং সিগারেটের উপর আমার কোন কালেই বিন্দুমাত্র আগ্রহ জন্মায়নি।ওর রেস্টুরেন্টের চা টা অবশ্য বেশ ভালো ছিল।১০ এ ৮ দেয়ার মতো। চা খাওয়ার মুহুর্তেই আসলো বন্ধু মিরাজ। খাওয়া শেষে রনি বলল 'চলো হাঁটতে যাই'। আমি বললাম 'কোথায়' বলল 'বংশী নদীর পাড়ে'। তিনজন রিক্সা নিয়ে পৌছে গেলাম বংশী নদীর পাড়ের মনু মিয়ার ঘাটে। যেটা সাভার থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কিছুটা দক্ষিণ দিকে। ◼️ চিত্র-১, বংশী নদী;বংশী নদী ধলেশ্বরী নদীর একটি শাখা, যে ধলেশ্বরী আবার যমুনা নদীর একটি শাখা নদী। এদেশে নিয়ন্ত্রণহীন কল কারখানা বিস্তারের ফলে যতগুলো নদী মারাত্মক রকম দূষণের শিকার হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে এই বংশী নদী। বছরের একটি বড় অংশ বিশেষ করে শীত মৌসুমে কলকারখানার বর্জ্যের কারণে এই নদীর পানি হয়েছে কুচকুচে আলকাতরার মতো কালো। তখন দূষিত পানির দুর্গন্ধে আশপাশে টেকা দায় হয়ে যায়। রেটিং:১০/৯
◼️ চিত্র -২, বিনোদন কেন্দ্র; এখন যেহেতু বর্ষা মৌসুম তাই নদীতে পানি বেশি হওয়ায় নদীর প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দেখে বুঝার উপায় নেই এই কিছুদিন আগেও এই নদী ছিল কালো কুচকুচে দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানির নালা, যেখানে গন্ধে যাওয়া যেত না।নদীর পানি যেহেতু এখন ভালো, আর বাঙালিরও বিনোদনের জায়গার অভাব, তাই কিছুটা রিফ্রেশমেন্টের জন্য এই জায়গায় এখন বেশ লোকাল জনসমাগম হয়।রেটিং:১০/৭
◼️চিত্র ৩- আমসত্ব:রনি নিয়ে আসলো আমসত্ত্ব সাথে বিট লবণ। খেতে তো খুব মজা হবার কথা কিন্তু আমার কাছে মোটেও ভালো লাগেনি। কারণ আমসত্ত্বটা ছিল অনেক পুরো এবং খুব বেশি শক্ত ছিল না , মানে ঠিকমতো রোদে শুকানো হয় নাই।এইজন্য এর টেস্ট বোঝা যাচ্ছিল না। আর একটু পাতলা এবং শক্ত হলে হয়তো বা এর টেস্ট ভালো বোঝা যেতো।
দাম: ১০টাকা

রেটিং: ১০/৪
রেটিং; ১০/৯
◼️চিত্র ৪,৫: চটপটি- আমার খুব প্রিয় খাবার। রনি ৩ প্লেট চটপটির অর্ডার দিয়ে আসলো। চটপটির দোকানটা বেশ ছোট কিন্তু অনেক ভিড়।রনি এবং মিরাজের ভাষায় এই বাবু মামার চটপটি নাকি খেতে খুবই ভালো।আমি ভাবলাম এইরকম ছোট দোকানের চটপটি আর কতই বা মজা হবে।তবে খাবার পর আমার ধারনা পাল্টে গেল, ওদের কথা পুরোপুরি সত্য, আসলে চটপটির স্বাদ ছিল অসাধারণ। আরো ভালো ভাবে বললে আমার খাওয়া সেরা চটপটির গুলোর একটি হচ্ছে এই বাবু মামার চটপটি।
চটপটির ঝাল, টক এবং সেই সাথে ডিফারেন্ট একটা ফ্লেভার ছিল, যেটা খাওয়ার স্বাদকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফুচকাটা বেশ মচমচে ছিল এবং আমার মনে হয় এটা অন্যান্য অনেক ফুচকার চেয়ে মানেও অনেক ভালো। চটপটি সুস্বাদু হওয়ার পেছনে ফুচকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দাম: প্রতি প্লেট ২০ টাকা।😊 আমরা তিনজন ৬ প্লেট খেয়েছি।
রেটিং; ১০/৯
◼️ চিত্র ৬, নদী দখল; কিছুদিন আগেও এই জায়গায় রাস্তার নিচে নদীর তীরটা নদীর মতো সমতল ছিল।আজকে গিয়ে দেখলাম সেই বিশাল জায়গাটা বালু ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে।কে বা কারা করেছে সেটা জানিনা, এটা নদীর জায়গা নাকি ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা তাও জানিনা। তবে আমার দেখে মনে হয়েছে নদীর জায়গা। নদীর জায়গা ভরাট করে ফেললেও খারাপ না। এখন যেখানে নদী পারাপার হতে হয় নৌকা দিয়ে, কয়েক বছর পর হয়তো ভরাট করতে করতে দুপাড় একত্র হয়ে যাবে, তখন হেঁটেই যাওয়া যাবে। এটাই সবচেয়ে ভাল বুদ্ধি, কোটি কোটি টাকা খরচ করে ব্রিজ করতে হবে না।
◼️চিত্র৭,৮ বংশী নদীতে সূর্যাস্ত: সূর্যাস্তটা বেশ ভালো লেগেছে।গতকাল আকাশটা বেশ পরিষ্কার ছিল, মেঘ খুব বেশি ছিল না। সূর্য অস্ত যাবার পরও আকাশটা অন্যান্য দিনের থেকে অনেক বেশি উজ্জ্বল ছিল। তবে আকাশে মেঘ থাকলে আরো একটি সৌন্দর্য অবলোকন করা যেত। সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আকাশে যদি থোকা থোকা মেঘ থাকে, তাহলে সেই মেঘের মধ্যে যখন অস্ত যাওয়া সূর্যের রক্তিম আভা এসে পড়ে তখন অনন্য এক সৌন্দর্য তৈরি হয়।
রেটিং:১০/৮
◼️চিত্র ৯, সিরামিক বাজারে মুরগির কাবাব: তিন জন সিরামিক বাজারে আসলাম মুরগির খাবার খেতে, জায়গাটা এনাম মেডিকেল কলেজ থেকে একটু দক্ষিণ দিকে। আমরা তিনটা মুরগির রান এবং ছয়টা পরোটা অর্ডার দিলাম। অর্ডার দিয়ে কথা বলার ফাঁকে খাবার চলে আসলো। মুরগির রানটা দেখতে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। কিন্তু খেতে আমার কাছে অত ভালো লাগেনি।উপরের অংশটা একটু মচমচে থাকলেও ভেতরে অংশটা আমার কাছে কেন যেন একটু কাচা কাচা মনে হয়েছে।রানটা খেতে খুব ঝাল ছিল, এজন্য সম্ভবত কাচা কাচা ভাবটা আরো কম বুঝা গেছে, না হলে আরো বেশি বুঝা যেতো। পরোটা টা আমার কাছে একটুও ভালো লাগেনি, বেশ শক্ত ছিল, মনে হয়েছে অনেকক্ষণ আগের ভাজা। দাম: রান-৮০ পিস,পরোটা- ৫টাকা রেটিং:১০/৭
◼️ হরলিক্স চা;রনির রেস্টুরেন্টের পাশে এবং সুপার মেডিকেলের সামনে এসে আবারও জোরাজুরির মধ্যে পরে চা খেতে হলো। জীবনে মনে হয় প্রথমবার একদিনে দু'কাপ চা খেলাম। চিন্তা করা যায়!! এবার অবশ্য খেলাম হরলিক্স চা। প্রথম শুনলাম হরলিক্স দিও চা হয়। দেখলাম হ্যাঁ হয় এবং খুব ভালো চা ই হয়। দাম:১০টাকা রেটিং ১০/৮ ১০.৩০ এর দিকে বাসায় ফিরে আসলাম.. এসে খেলা দেখতে শুরু করলাম। এই সারাটা বিকেল আমরা ঘুরেছি আর খেলার স্কোর দেখেছি, আর মনে মনে চেয়েছি ভারত এবং নিউজিল্যান্ড যেন হারে।কিন্তু হলো তো উল্টোটা, বাসার ফিরার একটু পরে ভারত জিতে গেল... আর ঘুমানোর একটু আগে দেখলাম নিউজিল্যান্ডও জিতে গেল। তার চেয়েও ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ ব্রাজিল সাপোর্টার ভাই দিলো।তার কাছ থেকে জানতে পারলাম ব্রাজিল নাকি ৫-০ গোলে প্যারাগুয়েকে হারাইছে। আল্লাহ বাচাইছে ৭-০ গোলে হারায় নাই, তাহলে তো আমাদের মুখটা বন্ধ হয়ে যেত। বাঁচানোর মালিক আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ..

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.