সূর্য দীঘল বাড়ী-১৯৭৯


পরিচালক; যৌথভাবে মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী।ছবিটি ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত আবু ইসহাকের কালজয়ী উপন্যাস সূর্য দীঘল বাড়ি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মীত।২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বাজেটের এই ছবিটি সরকারি অনুদানে নির্মিত।

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ বা আকালের সময় এক পরিবার ঢাকা থেকে বাঁচার তাগিদে তাদের পৈত্রিক নিবাস গ্রামে চলে আসে।তারা গ্রামে ফিরে এসে এমন এক খন্ড জমিতে ঘর তৈরী করে যেটি অপয়া ভিটে বলে পরিচিতি ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ওই ভিটাতেই  তারা বেঁচে থাকার জন্য জীবন সংগ্রাম শুরু করে... একসময় তাদের উপর নজর পড়ে গ্রাম্য মোড়লের... এই মোড়লের আছে ক্ষমতা, অর্থ, সমাজ আর শয়তানি। অন্যদিকে ওই গরিব পরিবারের আছে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যতা।

মুভিতে অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয়, দৃশ্যায়ন, সংলাপ, ড্রেসআপ, মেকআপ এগুলো দেখে আমার একবারও মনে হয়নি আমি কোন মুভি দেখতেছি, আমি কোন অভিনয় দেখতেছি, আমি কোন সাজানো কিছু দেখতেছি।সব কিছু এতটাই রিয়েলিস্টিক ছিল যে আমার মনে হয়েছে আমি ৬০-৭০ বছর আগের বাস্তব ঘটনা প্রত্যক্ষ করতেছি, যা আমার সামনে ঘটতেছে।একটি ছায়াছবির সব কিছু এতো রিয়ালিস্টিক কিভাবে হয়!! আমি দেখছি আর অবাক হয়ে ভেবেছি।

সমাজের নিম্ন শ্রেণীর অসহায় মানুষদের দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্রতা এবং তারপরও তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম এতটা নিখুঁতভাবে এই ছবিতে উপস্থাপন করা হয়েছে যা দেখে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে।এরকম হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ছায়াছবির পিছনে যেমন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনেক ভূমিকা রয়েছে।

ঠিক তেমনি বা তার থেকেও বেশি ভূমিকা রয়েছে এই ছবির পরিচালকদ্বয়ের। কারণ তাদের অসাধারণ নির্মাণশৈলীর কারণেই এই চলচ্চিত্রটিতে তৎকালীন সমাজের বাস্তবতা সফলভাবে ফুটে উঠেছে। আর উপন্যাসিক আবু ইসহাকের কথা তো না বললেই নয়, কারণ উনার উপন্যাস না থাকলে এরকম একটি কালজয়ী ছায়াছবি আমরা কখনই পেতাম না।
নিঃসন্দেহে এই উপন্যাস এবং চলচ্চিত্র 'সূর্য দীঘল বাড়ী' দুটিই বাংলা চলচ্চিত্র এবং বাংলা সাহিত্যে ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.