Paths of the Soul 2015

Imdb:7.5
Rotten Tomatoes:93%
Metacritic-90%
Country: China-Tibet
Language: Tibetan
Filming Locations: Tibet, China

একটি চাইনিজ-তিব্বতি মুভি এবং আমি কেন বিদেশি ভাষার মুভি এতো পছন্দ করি;

আমি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার কয়েক হাজার মুভি দেখেছি। অবশ্যই সংখ্যার দিক দিয়ে ইংরেজি ভাষার মুভিই বেশি। তবে আমি কখনোই শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য মুভি দেখিনা। আমার মুভি দেখার উদ্দেশ্য কিছুটা অন্যরকম, আমি মুভি দেখি বিভিন্ন দেশের মানুষের জীবন যাপন দেখার জন্য, বাস্তবতা দেখার জন্য, অন্য দেশের সংস্কৃতি দেখার জন্য, অন্য দেশের মানুষকে দেখার জন্য.... আসল কথা হচ্ছে অন্য দেশকে জানার এবং বুঝার জন্য। আর এজন্য আমি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার মুভি বেশি বেশি দেখার চেষ্টা করি।

অবশ্য আমার বিদেশি ভাষার মুভি দেখার আগ্রহ সেই ছোটবেলায় থেকেই। তখন আমাদের বাসায় একটি সাদা কালো টিভি ছিল।পাড়ায় আর কোন টিভি না থাকায় সবাই আমাদের বাসায় আসতো টিভি দেখতে।

তখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শুক্রবার বিকেলের বাংলা ছায়াছবি দেখার প্রতি, আমিও দেখতাম সবার সাথে। কিন্তু আমার মূল আগ্রহ থাকতো পরের দিন শনিবারে বিটিভিতে প্রচারিত মুভি অফ দা উইকে বিদেশি মুভি দেখার প্রতি.. অথবা বিভিন্ন টিভি সিরিজের প্রতি। ইংরেজি হোক বা অন্য কোন ভাষা, কিছুই কিন্তু বুঝতাম না, তবুও দেখতাম ,কারণ দেখতে খুব ভালো লাগতো।

আমি খুব বাচ-বিচার করে মুভি দেখি। অনেক জনপ্রিয় ক্যাটাগরির মুভি আমার কাছে ভালো লাগে না। এই যেমন, ইংরেজি ভাষার সাই-ফাই মুভি গুলো আমি খুব কম দেখি, আর ইংরেজি রোমান্টিক মুভি তো প্রায় একেবারেই দেখিনা।কারণ ওদের রোমান্টিক মুভিতে আজাইরা যৌনতা থাকে (কিছু ব্যতিক্রম আছে)

ভালো খারাপ জানিনা, আমার একটা অভ্যাস হচ্ছে যদি কোন মুভিতে অহেতুক এবং মাত্রা অতিরিক্ত যৌনতা থাকে.... দেখা শুরু করার পর যদি বুঝতে পারি অথবা আগাম যদি জানতে পারি তাহলে আর সেটা দেখি না। সেটা যত ভালো মুভিই হোক না। আর এই ধরনের মুভি আমি কাউকে দেখতেও বলি না।

যদি পাশের দেশ ভারতের কথায় আসি, তাহলে গত দুই-তিন বছরে সম্ভবত আমি ৪-৫ টি হিন্দি মুভি দেখেছি।এর মধ্যে তিন খানের একটি মুভি আছে, শাহরুখ খানের  Raees

তামিল মুভির কথা বললে, আমি এখন পর্যন্ত মনে হয় না ১০টির বেশি তামিল মুভি দেখেছি। এই ১০টিও দেখেছি বিপদে পড়ে অথবা বাধ্য হয়ে। বাহুবলী ১ দেখেছি,২ দেখিনি।১ দেখেছি এক বন্ধুর সাথে বসে... না করতে পারিনি, তাই বাধ্য হয়ে দেখতে হয়েছে। "আমার কাছে" পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য, ফালতু,হাইস্যকর মুভি ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে তামিল।

তবে ভারতের মালায়ালাম মুভি দেখেছি অনেকগুলো, সম্ভবত ৫০টির মতো হবে।এদের মুভির গল্প, সিনেমাটোগ্রাফি, অভিনয়, মেকআপ এবং ড্রেসআপ সবকিছু খুবই ইউনিক।এরা খুবই রিয়ালিস্টিক মুভি তৈরি করে। এদের গল্পগুলো হয় মানুষের জীবনের খুব কাছের ছোট ছোট কিছু মুহূর্ত উপর ভিত্তি করে।আমার কাছে ভারতের সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে মালায়ালাম।

এতটুকু পড়ে আমাকে নিশ্চয়ই খুব ভাব, অহংকারী এবং অতি পন্ডিত ধরনের মানুষ ভাবছেন। হয়তো ভাবছেন, ' তোর মতো মানুষ ওইসব মুভি না দেখলে কার কি এসে যায়'। ভাবতেই পারেন এবং ভাবার যথেষ্ট কারণও আছে। তবে আমি যেমন কিছুটা মাত্র তেমন বলেছি (পুরোটা বলিনি, বললে আমাকে আরো বেশি অহংকারী এবং ভাবওয়ালা মানুষ ভাববেন। অনেকেই এই লেখাটা পড়বে, তাই কিছুটা ছাড় দিয়ে লিখেছি)

আমার পছন্দ বা চিন্তা-ভাবনা নিশ্চয়ই আপনার সাথে মিলবে না.... যেমনটা আপনার পছন্দ বা চিন্তা-ভাবনা আমার সাথে মিলবে না।সবকিছু মিলে গেলে তো আর মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য থাকতো না।মিলে না বলেই আমরা আলাদা, আমাদের চিন্তা ভাবনা আলাদা, আমাদের পছন্দ-অপছন্দ গুলোও আলাদা।

🔻এখন প্রশ্ন হতে পারে "কেন আমি বিদেশী ভাষার মুভি এতো বেশি এটি পছন্দ করি? উত্তরটা এইরকম,

আমি চাইলেও পৃথিবীর বহু দেশে যেতে পারবো না। কখনো কি ব্রাজিল যেতে পারব? অথবা আর্জেন্টিনা? বা নরওয়ে? অথবা আফ্রিকার কোন দেশে?.. হয়তো কখনো সম্ভব হবে না। আমার খুব ইচ্ছা নরওয়ে যাওয়ার... আমার স্বপ্নের দেশ। সেখানে গিয়ে নর্দান লাইট দেখব।কিন্তু এটা আদৌ কতটুকু সম্ভব, জানি না।

সশরীরে কখনো এইসব দেশে যেতে পারবো কিনা জানিনা। তবে খুব কাঙ্খিত এসব দেশ এবং অজানা আরো অনেক দেশ ঘুরে আসতে পারি সেই দেশের মুভি দেখার মাধ্যমে।এই দেশগুলোর মুভি দেখে তাদের সংস্কৃতি, তাদের অতীত ও ঐতিহ্য, তাদের মানুষের জীবন যাপন এবং তাদের দেশ সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি। এখানে নিশ্চই কেউ আমাকে ভিসা না থাকার কারণে আটকাতে পারবে না।

তবে একদম যে বাধা নেই তা কিন্তু না, এখানেও বাধা আছে। মুভি ডাউনলোড করার বাধা। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ মুভি তৈরি করলেও সব দেশের মুভির লিংক ইন্টারনেটে পাওয়া সম্ভব না।এটা হচ্ছে একটি বড় বাধা।

এই যেমন, মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়ার কয়েকটি মুভির নাম বাছাই করে রেখেছি অনেকদিন আগে.... কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও এখন পর্যন্ত কোন ডাউনলোড লিংক খুজে পাইনি।তাই চাইলেও সব দেশের মুভি দেখা যায় না, ডাউনলোড সীমাবদ্ধতার কারণে। এই সীমাবদ্ধতা না থাকলে আমি পৃথিবীর সব দেশের মুভি হয়তো এতদিনে দেখে ফেলতাম।

এই কথা গুলো অবশ্য লিখার ইচ্ছা ছিল আগেই... আজকে এই কথাগুলো হঠাৎ করে বলার একটি কারণ হচ্ছে, কয়েকদিন আগে চাইনিজ একটি মুভি দেখেছি । যদিও নামেই এটা চাইনিজ মুভি,কিন্তু আসলে এটা আগাগোড়া পুরোটাই একটি তিব্বতি মুভি।এই মুভিটি দেখে এবং মুভিতে মানুষের জীবনচিত্র এবং এর সিনেমাটোগ্রাফি দেখে আমার মনে হয়েছে 'ঠিক এইগুলোর জন্যেই আমি বিদেশি ভাষার মুভি এতো পছন্দ করি। যা আমাকে অজানাকে জানতে সাহায্য করে'।

🔻গল্প;

তিব্বতের জনবিচ্ছিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে কিছু পরিবার বাস করে। যার মধ্যে এক পরিবারের বৃদ্ধের ইচ্ছা 'সে তিব্বতের রাজধানী লাসায় তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে তীর্থযাত্রায় যাবে।এই যাত্রাটা তাদের কাছে খুবই পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সাথে খুবই পুণ্যের। তাদের স্থান থেকে লাসা প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দূরে। এই ১২০০ কিলোমিটার তাদেরকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে এবং এটাই যাত্রার নিয়ম।

পুরোটা রাস্তায় চলার সময় প্রতি ৬-৭ পা সামনে যাওয়ার পর একবার করে উপুড় হয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়তে হবে। এই শুয়ে পড়ার মুহূর্তে দুহাত রাস্তার সাথে ঘষা দিয়ে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। পিচের সাথে ঘষা খেয়ে হাতের তালু যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য দুই হাতের তালুতে তারা কাঠ বেঁধে রাখতো।

এভাবেই তাদের ১২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে লাসায় পৌঁছাতে হবে। ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক বা তুষারপাত হোক, যত যাই হোক না কেন ১২০০ কিলোমিটার তাদেরকে হাঁটতে হবে এবং প্রতি ৬-৭ পা হাঁটার পর শুয়ে পড়তে হবে। কিন্তু কোনভাবেই রাস্তা স্কিপ করা যাবে না। কোথাও বিশ্রাম নিলে ঠিক সেখান থেকে আবার যাত্রা শুরু করতে হবে, যেখান থেকে তারা বিশ্রাম নিয়েছে।

ওই বৃদ্ধ একা যেতে পারবে না, তাই তাদের ফ্যামিলির সবাই সিদ্ধান্ত নেয় তারাও যাবে। তাদের সাথে পাশের বাড়ির এক পরিবারও যাবার রাজী হয়। তারা তাদের কৃষি কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাকে তাদের দৈনন্দিন কাজে প্রয়োজনীয় সকল কিছু উঠিয়ে নেয়। আর তীর্থযাত্রীরা পায়ে হেঁটে ১২০০ কিলোমিটার দূরে লাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পেছনে খুব ধীরগতিতে ট্রাক চলতে থাকে, আর তার সামনে সমস্ত ঝড়-বৃষ্টি অপেক্ষা করে তীর্থযাত্রীরা সামনে চলতে থাকে।

প্রায় দশ মাস পর সমস্ত বাধা-বিপত্তি, বিপদসংকুল রাস্তা পাড়ি দিয়ে তারা একসময় তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যস্থলে এসে পৌঁছায়।

🔻মন্তব্য;

মুভিতে অভিনয় দেখার মত খুব বেশি কিছু নেই...নেই খুব বেশি ডায়লগ এবং অবশ্যই মুভিটি খুব স্বল্প বাজেটের।তারপরও অনেকগুলো কারণে মুভিটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।এর মধ্যে একটি হচ্ছে মুভি সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি এবং আরেকটি হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা, যে ভালোবাসার মাঝখানে কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

সম্পূর্ণ মুভিতে এই তীর্থযাত্রীরা কিভাবে, কেমন পরিবেশে, কতটা ত্যাগ স্বীকার করে তাদের ধর্মীয় আচার পালন করে শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার জন্য সেটাই দেখানো হয়েছে। মুভিতে অভিনীত চরিত্রদের কথাবার্তা খুবই কম।

 এই তীর্থযাত্রীদের ১২০০ কিলোমিটার হাঁটার সময় তিব্বতের যে প্রাকৃতিক দৃশ্য আমি দেখেছি তা আমার জীবনে দেখা অন্য কোন মুভিতে দেখেছি বলে আমার মনে পড়ে না।

মুভিতে দৃশ্যায়িত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। মুভি দেখার সময় মনে হয়েছে আমার এলইডি টিভিটি যেন আমার দেয়ালে ঝুলে থাকা একটি ওয়ালপেপার....অবাক হয়ে দেখি আর ভাবি 'আহ্ক ত পৃথিবীটা কতটা সুন্দর'। কখনো বরফে ঢাকা বিশাল বিশাল সাদা পাহাড়... কখনো বা পাথরের পাহাড়.... কখনো বা পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা বৃষ্টিস্নাত পিচের রাস্তা।

এই যে আমি বসে বসে তিব্বতের অপার সৌন্দর্য অবলোকন করলাম,কিছু মানুষের ঈশ্বরের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখতে পেলাম.. কিছু মানুষের জীবন, আচার, রীতিনীতি দেখতে পেলাম এটাই হচ্ছে আমার কাছে ‌বিদেশী ভাষার মুভি দেখার সার্থকতা।আর এই জন্যই আমি বিদেশী ভাষার মুভি দেখতে বেশি পছন্দ করি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

দয়াকরে কমেন্টে স্পাম মেসেজ দেবেন না।