প্রসঙ্গ:ধর্ষণ এবং মাদ্রাসাকে দোষারোপ

কথাগুলো বলা উচিত কিনা জানিনা, কিন্তু না বলেও পারছি না।গত দুই দিনে আগে ধর্ষণ ইসূ নিয়ে করা একটি পোষ্টে দেখলাম মাদ্রাসাকে 'নরক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং অপর একটি পোস্টে ছেলে-মেয়েকে মাদ্রাসায় ভর্তি করার ব্যাপারে 'দশবার চিন্তা' করতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি আরো অনেকেই দেখি সুযোগ পেলেই মাদ্রাসাকে হেয় করে পোস্ট করে।আচ্ছা, আপনাদের মাদ্রাসা নিয়ে এতো চুলকানি কেন!!?

আচ্ছা, এই দেশের সব ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানি কি শুধু মাদ্রাসা'তেই হয়। অন্য সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি এইধরনের কোন অপরাধ ঘটে না!?

কিছু দিন আগে নারায়ণগঞ্জে এক শিক্ষক ২০ জন ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে,সে কোন মাদ্রাসার শিক্ষক ছিল?

শিক্ষক পরিমল জয়ধর কোন মাদ্রাসার শিক্ষক ছিল?

অথবা কুষ্টিয়ার দেড় শতাধিক ছাত্রীকে ধর্ষণকারী শিক্ষক পান্না মাস্টার কোন মাদ্রাসার শিক্ষক ছিল?

ধর্ষনের সেঞ্চুরি করে মিষ্টি বিতরন করা মানিক কোন মাদ্রাসার ছাত্র ছিল?... এইরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে।

কই গুটি কয়েক এই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অপকর্মের দায় তো সব 'সাধারণ শিক্ষা' প্রতিষ্ঠানের উপর চাপান না। তাহলে গুটি কয়েক কুলাঙ্গার মাদ্রাসা শিক্ষকের অপকর্মের দায় কেন পুরো মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকেন?

হ্যাঁ,এই কথা অস্বীকার করার কোন উপায়ই নেই, সম্প্রতি কালে মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা অনেক ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগে ১২ জন শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে এক মাদ্রাসা শিক্ষকে গ্রেফতার করা হয়েছে.. এইরকম আরো অনেক আছে। এটা খুবই লজ্জা এবং দুঃখজনক যে, যায়া ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে এইরকম অপকর্মের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করবে, তাদের হাত থেকেই ছেলে-মেয়েরা রক্ষা পাচ্ছে না।

মাদ্রাসার বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানোর আগে আপনাকে বুঝতে হবে খারাপ মানুষ সব জায়গায়ই আছে। মাদ্রাসার মতো জায়গায় থেকে যারা ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির মতো অপরাধ ঘটাতে পারে তাদের মধ্যে ধর্মের প্রতি কতটা ভালোবাসা আছে সেটা একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়। তাদের উপরটা লোক দেখানো ধর্মের আবরণ দিয়ে ঢাকা.... ভেতরে ভেতরে তারা একেকটা হিংস্র পশুর মত। এরা হচ্ছে সমাজের সবচেয়ে জঘন্য মানুষ।

এখন গুটিকয়েক এইরকম জঘন্য মানুষের জন্য তো আপনি পুরো মাদ্রাসা শিক্ষা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গণহারে দোষারোপ করতে পারেন না। আর মাদ্রাসায় পড়ায় এবং পাড়ে বলেই সবাই একবারে ভালো মানুষ হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই।

মাদ্রাসা মানুষকে ধর্মের শিক্ষা দেয়। আর ধর্ম মানুষকে ভাল হওয়ার জ্ঞান দেয়, মানুষকে তার কৃতকর্মের জন্য পরকালের ভয় দেখায়।এখন কেউ যদি সেই শিক্ষা নিয়ে উল্টোটা করে তাহলে তো মাদ্রাসা এবং ধর্মের আর কিছুই করার থাকে না। কারণ ধর্ম কাউকে জোর করতে পারে না। তাই উল্টোটা যারা করে তাদেরকে সোজা পথে আনার জন্য প্রয়োজন হয় আইনের.... কিন্তু সেই আইন কি আমাদের দেশে আদৌও সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে!!?প্রথম থেকেই মাদ্রাসায় ঘটা যৌন সংক্রান্ত অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হলে পরিস্থিতি হয়তো এরকম হতো না।

আমরাও চাই যে সমস্ত মাদ্রাসার শিক্ষক এবং ছাত্র যারা ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির সাথে জড়িত তাদের বিচার  করা হোক, তাদের বিচার কঠিন এবং সবার আগে করা হোক।প্রয়োজনে কঠিন বিচারের জন্য তাদের বিচার ইসলামী শরিয়াহ আইনে করা হোক। ঠিক যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে কার্যকর করা হয়।

আর অন্যান্য ধর্ষকের বিচার দেশের প্রচলিত আইনে করা হোক, যার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ধর্ষনের শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়ার আইনটাই তো আপনারা তৈরি করতে পারলেন না... অথচ দেশ আপনারাই চালান।

রাষ্ট্রপরিচালনার যে তিনটি স্তর আইন, বিচার এবং শাসন বিভাগ সেখানে মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রায় অস্তিত্ব নেই,সব জায়গায় আপনারাই, মানে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা ব্যক্তিরা।আপনারাই আইন তৈরি করেন, তা বাস্তবায়ন করেন এবং আপনরাই বিচার কার্য করেন।

তারপরও কেন এই দেশে প্রতিদিন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তারপরও কেন মেয়েরা ঘর থেকে বের হলেই কোন না কোন ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়, তারপরও কেন দেশে এতো অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, দূর্নীতি,খুন-হত্যা।

আচ্ছা, দেশে এই যে প্রতিদিন অজস্র যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে তার সাথে কত জন মাদ্রাসার ছাত্র জড়িত??

বাসে উঠে মেয়েরা প্রতিনিয়ত হেনস্থার শিকার হচ্ছে,এই হেনস্থাকরীদের মধ্যে কতজন মাদ্রাসার ছাত্র একটু পারলে দেখাবেন। দেশ তো এখন মাদকের অভয়ারণ্য, আচ্ছা এই মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারীদের মধ্যে কত জন মাদ্রাসার ছাত্র আছে?

যৌতুকের জন্য নির্যাতন, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, বয়স্ক মা-বাবাকে রাস্তায় ফেলে আসা, এইরকম নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনার সাথে কতো জন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক জড়িত আছে এটা খুব জানতে ইচ্ছে করে।

অপরাধীকে অপরাধীর চোখেই দেখুন।এখানে শ্রেণীবৈষম্য করে হিংসা তৈরি করবেন না।হিংসায় হিংসা জন্ম দেয়, সেখান থেকে তৈরি হয় আরেক নতুন অপরাধ।

আপনি অনেক অনেক ডিগ্রি অর্জন করে খুব গর্বের সাথে মনে করতে পারেন 'মাদ্রাসায় পড়ে সব গরিব মানুষের পোলাপান, আর বের হয় সব গরু-ছাগল।এমনটা ভাবলে এটা হবে আপনার অজ্ঞতার পরিচয়।
আপনার এই অনেক অনেক ডিগ্রির জ্ঞান নিয়ে আপনি যদি একজন মাদ্রাসা আলেমের জ্ঞানকে মূল্যায়ন করতে না চান, তাহলে আপনার জ্ঞানকেও মূল্যায়ন না করার যথেষ্ট কারণ একজন মাদ্রাসার আলেমের কাছে আছে।

আপনার কাছে যেমন আপনার জ্ঞান সেরা, ঠিক তেমনি একজন মাদ্রাসা থেকে বের হওয়া আলেমের জ্ঞানও তার কাছে সেরা।

আপনি মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের কথা বলতে পারেন, মাদ্রাসা ছাত্র ছাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার কথা বলতে পারেন, শিক্ষক কর্তৃক মাদ্রাসার ছাত্রদের অন্যায়ভাবে নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলতে পারেন, মাদ্রাসা ছাত্রদের কিভাবে দেশের কাজে লাগানো যায় সেটার কথা বলতে পারেন....

কিন্তু আপনি মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বলতে পারেন না, কারণ এই জ্ঞান এবং এই অধিকার কোনটাই আপনার নেই।

এত টুকু পড়ে হয়তো অনুমান করবেন আমি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম।জ্বি হ্যাঁ,আমি দাখিল (এস.এস.সি) পর্যন্ত
মাদ্রাসায় পড়েছিলাম এবং পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যাই।

তবে আমি সবসময় গর্ব করে বলি আমি কোন এক সময় মাদ্রাসা ছাত্র ছিলাম এবং আমি এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি "একজন নারী সে যেকোনো পোশাকে এবং যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন সে আমার কাছে ততটাই নিরাপদ, যতটা আমার মা, আমার বোন এবং আমার অন্য আত্মীয়-স্বজন আমার কাছে নিরাপদ"....❤️

#LutforRahman

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.