১৬.০৭.২০১৯ ইং, সময়: বিকেল ৪টা
সাভার উপজেলা কার্যালয়ে ছোট্ট একটা কাজ সেরে দুপুরে লাঞ্চ করে আমি এবং নুর চলে আসলাম রনির রেস্টুরেন্ট। আগে থেকেই মোটামুটি পরিকল্পনা করা আছে আমরা আজকে খরার চর যাবো।খরার চর কোথায় এবং এখানে কেন যাবো সেটা একটু পরে বলছি। খরার চর যাওয়ার পরিকল্পনা অবশ্য আমাদের অনেক দিন ধরেই চলছে, কিন্তু সময় এবং সুযোগ হচ্ছিল না। রনির জন্য রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছি, ও আসলেই বের হব। কিন্তু বরাবরের মতই ওর আজকেও আসতে বেশ খানিকটা দেরি হলো।
বের হওয়ার মুখেই শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি, অঝোরে পানি পড়ছিল। কি আর করার, রেস্টুরেন্টে বসে বসে আমি মোবাইল চালাচ্ছিলাম, আর ওরা দুজন মোবাইলে ক্যারাম খেলছিল। একসময় বৃষ্টি থেমে গেল.. কিন্তু তখন আমার আর যেতে ইচ্ছে করছিল না, খুব আলসেমি হচ্ছিল। রনির জোরাজুরিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিকেল ৫টার দিকে খরার চরের উদ্দেশ্যে বের হলাম। রনির ভাষায় "আজকে না গেলে আর কখনোই যাওয়া হবে না, কারণ আমরা নাকি খুবই অলস"। ওর কথা অবশ্য অনেকটা সত্য।
ওয়াপদা রোডে এসে তিন চাকার একটি রিক্সা নিলাম। তিন চাকার রিকশা গুলো বেশ ভালো, অনেক আরামদায়ক। একজন সামনে এবং দুজন পিছনে খুব আরাম করে বসা যায়। অন্য রিক্সাগুলোতে তিনজন এক সাথে পেছনে বসা খুবই কষ্টকর। রিক্সা সাভার নামাবাজার চলে আসলো। আমরা রিকশা থেকে নেমে দক্ষিণ নামা বাজার জামে মসজিদে আসরের নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষ করে হেঁটে হেঁটে নতুন নির্মিত নামা বাজার ব্রিজের কাছে চলে আসলো।
বংশী নদীর উপর নতুন করে তৈরি করা এই ব্রিজটি সাভার বাজার এবং নদীর ওপারে ধামরাইয়ের ফোর্ডনগরকে সংযুক্ত করেছে।এই ব্রিজ দিয়েই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে খরার চরে যাব। ব্রিজ থেকে ১৫০ টাকা দিয়ে খরার চর যাওয়ার একটি ব্যাটারি চালিত ভ্যান ভাড়া করলাম... বিকেল ৫.৪০ মিনিটের দিকে ধীরে ধীরে ভ্যান গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করল।
খরার চর কোথায় এবং কেন যাবো??
সাভার এবং ধামরাইকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয়া বংশী নদীর পূর্ব পাশে হচ্ছে সাভার এবং পশ্চিম পাশে ধামরাই। খরার চর হচ্ছে ধামরাই উপজেলার খুব ভিতরের দিকে খুব ছোট একটি স্থানীয় বাজার। এই জায়গাটি সাভার বাজার থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে.... মানে বংশী নদীর ওই পাড়ে। আমরা ছোটবেলায় নদীর ওই পাড়কে স্থানীয় ভাষায় গাঙ্গের ওইপাড় বলতাম। এখনো অনেকে এভাবেই ডাকে।
নদীর ওই পাড়ের মানুষ নদীর এই পাড়ের মানে সাভারের মানুষের থেকে অনেক অনেক আলাদা। আমার কাছে কেন যেন মনে হয় তারা অন্য একটা জগতে থাকে। তারা অনেক অনেক সহজ সরল, বিনয়ী এবং ভদ্র। ওইপাড়ের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী। তাদের বিস্তীর্ণ জোড়া ফসলের মাঠে তারা বিভিন্ন রকম শাক সবজি রোপন করে, যেগুলো তারা সাভার বাজার এনে বিক্রি করে।নদীর ওই পারে গেলে ভিন্ন একটা জগত দেখা যায়, কিছু সহজ সরল মানুষ দেখা যায়, তাদের বৈচিত্র্যময় জীবন দেখা যায়, বিস্তীর্ণ সবুজ দেখা যায়, আমাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সংস্কৃতি কিছুটা হলেও ঐদিকে এখনো রয়ে গেছে।
এই জন্য মাঝেমধ্যে আমি একা হলেও নদীর ওপারে যাই। খুব বেশি ভেতরে কখনো যাওয়া হয়নি, তবে অনেক দিন নদী পার হয়ে আশপাশে ঘুরে চলে এসেছি। এখন অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে গেছে। সাভারের সাথে ওই পারের যোগাযোগের জন্য নতুন ব্রিজ হয়েছে, রাস্তাঘাট সব পিচ ঢালাই হয়ে গেছে। ফলে তাদের জীবনযাপনও অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। উন্নয়নের এই একটা খারাপ দিক মনে হয়, মানুষের জীবন যাপনের সাথে সাথে মানুষও পাল্টে যায়।
খরার চর দেখার মত খুব বেশি বিশেষ কিছুই নেই।ওই যে বললাম কিছু মানুষ, তাদের জীবন চিত্র, যাতায়াতের সময় দুই পাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অজানা এবং ভিন্ন কিছু দেখার প্রয়াসেই মূলত ঐদিকে যাওয়া।
সাভার বাজার থেকে যে রাস্তা দিয়ে আমরা খরার চর যাচ্ছি এই রাস্তা দিয়ে খরার চর পাড় হয়ে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যাওয়া যায়।পিচ ঢালাই রাস্তা, রাস্তাটা নতুন,৪-৫ হবে তৈরি হয়েছে। তবে এই ৪-৫ বছরে রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, এর থেকে জঘন্য আর ভয়ঙ্কর রাস্তা আর হতে পারে না। অল্প একটু পর পরই ভাঙ্গা আর বড় বড় গর্ত.... অসম্ভব ঝাঁকুনিতে স্থির হয়ে বসে থাকা যায় না এবং প্রতি মূহুর্তে রয়েছে ভ্যান উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা।পুরো ১৪-১৫ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা একই রকম।
চেষ্টা করেছি অনেক ছবি তুলতে, ছবি তুলার অনেক সাবজেক্টও ছিল, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ঝাঁকুনি। একহাতে ভ্যান ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে ছবি তুলতে হয়।ফলে ঝাঁকুনির কারণে কোনো ছবিই ভালো আসছিল না।
যাইহোক, ঝাঁকুনি খেতে খেতে ঠিক সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে আমাদের গন্তব্য খরার চর বাজারে পৌঁছে গেলাম। আসলে আমরা অনেকটা ভুল সময়ে এখানে এসেছি,আসা উচিৎ আরো অন্তত দু-তিন ঘন্টা আগে। আগে আসলে আশপাশের এলাকাটা ভালো করে ঘুরে দেখতে পেতাম। কিন্তু আমরা এমন একসময়ে আসলাম একটু পরেই মাগরিবের আযান দিবে, আবার এখান থেকে সাভার ফেরত যেতেও একঘন্টা সময়ের ব্যাপার।যে ভাঙ্গাচুরা রাস্তা এই রাস্তা দিয়ে রাতে চলাচল অত্যন্ত বিপজ্জনক।
চিন্তা করলাম, চলেই যখন আসছি যতটুকু পারা যায় বাজারটা ঘুরে দেখি। বাজারটা বেশ ছোট, বেশিরভাগ দোকানপাট ইটের তৈরি, তবে অনেক দোকান আছে টিনের তৈরি।মানুষের জীবন যাপনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার প্রায় সবই এখানে পাওয়া যায়। হাঁটতে হাঁটতে বাজারের এক জায়গায় এসে দেখি অনেক অনেক মিষ্টি কুমড়া, লাউ, জালি কুমড়া এবং আরো বিভিন্ন সবজি। আমি একসাথে এত সবজি এর আগে কখনো দেখিনি।
আগেই বলেছি এলাকাটা কৃষি প্রধান। এখানকার মানুষ সারা বছরই কোনো না কোনো সবজি চাষ করে থাকে। তাদের সেই সবজিগুলো এই বাজারে এনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে... পাইকাররা এগুলো সাভার এবং কাওরান বাজারে নিয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম এক মিষ্টির দোকানে। দোকানটা খুব ছোট, তবে অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং মিষ্টি খাওয়ার পর বুঝলাম মিষ্টির স্বাদ এবং মান বেশ ভালো।
মিষ্টির দোকান থেকে বের হতে হতেই মাগরিবের আজান দিয়ে দিল। বাজারেই মসজিদ আছে, আমরা সেখানে গেলাম নামাজ পড়তে।মসজিদটা সম্ভবত অনেক পুরনো।মসজিদের ফ্লোর, ওয়াল এবং দরজা দেখে সেটাই মনে হলো। মসজিদের দরজাটা দু-পাল্লার কাঠের দরজা, কিছুটা ভাঙ্গা ভাঙ্গা। আগে গ্রামের পুরনো অনেক বাড়িতে এরকম দুই পাল্লার কাঠের দরজা দেখা যেত। নামাজ শেষে দেখলাম পুরো মসজিদ ভর্তি মুসল্লী, ভেতরে কোনো খালি জায়গা নেই।
যেহেতু রাত হয়ে গেছে তাই এখন আমাদের ফিরতে হবে।তবে যে রাস্তা দিয়ে এসেছি সেই ভাঙ্গাচুড়া রাস্তা দিয়ে এই রাতের বেলায় আর যাওয়া যাবে না। রনির বুদ্ধিতে অটোরিকশা করে আরো অনেকটা ভেতরে মানে পশ্চিম দিকে সিঙ্গাইর বাজারে (মানিকগঞ্জ) গেলাম। সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে সিঙ্গাইর বাসস্ট্যান্ড পৌছালাম এবং এখান থেকে মেক্সিতে করে সোজা হেমায়েতপুর (সাভার) চলে আসলাম।খুব ক্লান্ত থাকায় মেক্সিতে আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল,ঘুমের চাপে আমার মাথা অন্য একজনের কাঁধে গিয়ে বেশ কয়েকবার ঠেকেছে। এরপর হেমায়েতপুর থেকে বাসে করে সাভার বাসস্ট্যান্ডে পৌছালাম।
বেশ কয়েকবার গাড়ি পাল্টানোর ঝামেলা এবং সময় একটু বেশি লাগলেও এই রাস্তাটা খুবই ভালো। একদম আরামে সাভার পৌঁছে গেছি।
পুরো যাত্রাটা আমার কাছে ভালোই লেগেছে। তবে আমরা যদি আরো দু-এক ঘন্টা আগে খরার চর যেতে পারতাম তবে এই ভালো লাগাটা পরিপূর্ণ রূপ নিত।
LutforRahman
সাভার উপজেলা কার্যালয়ে ছোট্ট একটা কাজ সেরে দুপুরে লাঞ্চ করে আমি এবং নুর চলে আসলাম রনির রেস্টুরেন্ট। আগে থেকেই মোটামুটি পরিকল্পনা করা আছে আমরা আজকে খরার চর যাবো।খরার চর কোথায় এবং এখানে কেন যাবো সেটা একটু পরে বলছি। খরার চর যাওয়ার পরিকল্পনা অবশ্য আমাদের অনেক দিন ধরেই চলছে, কিন্তু সময় এবং সুযোগ হচ্ছিল না। রনির জন্য রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছি, ও আসলেই বের হব। কিন্তু বরাবরের মতই ওর আজকেও আসতে বেশ খানিকটা দেরি হলো।
বের হওয়ার মুখেই শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি, অঝোরে পানি পড়ছিল। কি আর করার, রেস্টুরেন্টে বসে বসে আমি মোবাইল চালাচ্ছিলাম, আর ওরা দুজন মোবাইলে ক্যারাম খেলছিল। একসময় বৃষ্টি থেমে গেল.. কিন্তু তখন আমার আর যেতে ইচ্ছে করছিল না, খুব আলসেমি হচ্ছিল। রনির জোরাজুরিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিকেল ৫টার দিকে খরার চরের উদ্দেশ্যে বের হলাম। রনির ভাষায় "আজকে না গেলে আর কখনোই যাওয়া হবে না, কারণ আমরা নাকি খুবই অলস"। ওর কথা অবশ্য অনেকটা সত্য।
ওয়াপদা রোডে এসে তিন চাকার একটি রিক্সা নিলাম। তিন চাকার রিকশা গুলো বেশ ভালো, অনেক আরামদায়ক। একজন সামনে এবং দুজন পিছনে খুব আরাম করে বসা যায়। অন্য রিক্সাগুলোতে তিনজন এক সাথে পেছনে বসা খুবই কষ্টকর। রিক্সা সাভার নামাবাজার চলে আসলো। আমরা রিকশা থেকে নেমে দক্ষিণ নামা বাজার জামে মসজিদে আসরের নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষ করে হেঁটে হেঁটে নতুন নির্মিত নামা বাজার ব্রিজের কাছে চলে আসলো।
বংশী নদীর উপর নতুন করে তৈরি করা এই ব্রিজটি সাভার বাজার এবং নদীর ওপারে ধামরাইয়ের ফোর্ডনগরকে সংযুক্ত করেছে।এই ব্রিজ দিয়েই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে খরার চরে যাব। ব্রিজ থেকে ১৫০ টাকা দিয়ে খরার চর যাওয়ার একটি ব্যাটারি চালিত ভ্যান ভাড়া করলাম... বিকেল ৫.৪০ মিনিটের দিকে ধীরে ধীরে ভ্যান গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করল।
খরার চর কোথায় এবং কেন যাবো??
সাভার এবং ধামরাইকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয়া বংশী নদীর পূর্ব পাশে হচ্ছে সাভার এবং পশ্চিম পাশে ধামরাই। খরার চর হচ্ছে ধামরাই উপজেলার খুব ভিতরের দিকে খুব ছোট একটি স্থানীয় বাজার। এই জায়গাটি সাভার বাজার থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে.... মানে বংশী নদীর ওই পাড়ে। আমরা ছোটবেলায় নদীর ওই পাড়কে স্থানীয় ভাষায় গাঙ্গের ওইপাড় বলতাম। এখনো অনেকে এভাবেই ডাকে।
নদীর ওই পাড়ের মানুষ নদীর এই পাড়ের মানে সাভারের মানুষের থেকে অনেক অনেক আলাদা। আমার কাছে কেন যেন মনে হয় তারা অন্য একটা জগতে থাকে। তারা অনেক অনেক সহজ সরল, বিনয়ী এবং ভদ্র। ওইপাড়ের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী। তাদের বিস্তীর্ণ জোড়া ফসলের মাঠে তারা বিভিন্ন রকম শাক সবজি রোপন করে, যেগুলো তারা সাভার বাজার এনে বিক্রি করে।নদীর ওই পারে গেলে ভিন্ন একটা জগত দেখা যায়, কিছু সহজ সরল মানুষ দেখা যায়, তাদের বৈচিত্র্যময় জীবন দেখা যায়, বিস্তীর্ণ সবুজ দেখা যায়, আমাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সংস্কৃতি কিছুটা হলেও ঐদিকে এখনো রয়ে গেছে।
এই জন্য মাঝেমধ্যে আমি একা হলেও নদীর ওপারে যাই। খুব বেশি ভেতরে কখনো যাওয়া হয়নি, তবে অনেক দিন নদী পার হয়ে আশপাশে ঘুরে চলে এসেছি। এখন অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে গেছে। সাভারের সাথে ওই পারের যোগাযোগের জন্য নতুন ব্রিজ হয়েছে, রাস্তাঘাট সব পিচ ঢালাই হয়ে গেছে। ফলে তাদের জীবনযাপনও অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। উন্নয়নের এই একটা খারাপ দিক মনে হয়, মানুষের জীবন যাপনের সাথে সাথে মানুষও পাল্টে যায়।
খরার চর দেখার মত খুব বেশি বিশেষ কিছুই নেই।ওই যে বললাম কিছু মানুষ, তাদের জীবন চিত্র, যাতায়াতের সময় দুই পাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অজানা এবং ভিন্ন কিছু দেখার প্রয়াসেই মূলত ঐদিকে যাওয়া।
সাভার বাজার থেকে যে রাস্তা দিয়ে আমরা খরার চর যাচ্ছি এই রাস্তা দিয়ে খরার চর পাড় হয়ে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যাওয়া যায়।পিচ ঢালাই রাস্তা, রাস্তাটা নতুন,৪-৫ হবে তৈরি হয়েছে। তবে এই ৪-৫ বছরে রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, এর থেকে জঘন্য আর ভয়ঙ্কর রাস্তা আর হতে পারে না। অল্প একটু পর পরই ভাঙ্গা আর বড় বড় গর্ত.... অসম্ভব ঝাঁকুনিতে স্থির হয়ে বসে থাকা যায় না এবং প্রতি মূহুর্তে রয়েছে ভ্যান উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা।পুরো ১৪-১৫ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা একই রকম।
চেষ্টা করেছি অনেক ছবি তুলতে, ছবি তুলার অনেক সাবজেক্টও ছিল, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ঝাঁকুনি। একহাতে ভ্যান ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে ছবি তুলতে হয়।ফলে ঝাঁকুনির কারণে কোনো ছবিই ভালো আসছিল না।
যাইহোক, ঝাঁকুনি খেতে খেতে ঠিক সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে আমাদের গন্তব্য খরার চর বাজারে পৌঁছে গেলাম। আসলে আমরা অনেকটা ভুল সময়ে এখানে এসেছি,আসা উচিৎ আরো অন্তত দু-তিন ঘন্টা আগে। আগে আসলে আশপাশের এলাকাটা ভালো করে ঘুরে দেখতে পেতাম। কিন্তু আমরা এমন একসময়ে আসলাম একটু পরেই মাগরিবের আযান দিবে, আবার এখান থেকে সাভার ফেরত যেতেও একঘন্টা সময়ের ব্যাপার।যে ভাঙ্গাচুরা রাস্তা এই রাস্তা দিয়ে রাতে চলাচল অত্যন্ত বিপজ্জনক।
চিন্তা করলাম, চলেই যখন আসছি যতটুকু পারা যায় বাজারটা ঘুরে দেখি। বাজারটা বেশ ছোট, বেশিরভাগ দোকানপাট ইটের তৈরি, তবে অনেক দোকান আছে টিনের তৈরি।মানুষের জীবন যাপনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার প্রায় সবই এখানে পাওয়া যায়। হাঁটতে হাঁটতে বাজারের এক জায়গায় এসে দেখি অনেক অনেক মিষ্টি কুমড়া, লাউ, জালি কুমড়া এবং আরো বিভিন্ন সবজি। আমি একসাথে এত সবজি এর আগে কখনো দেখিনি।
আগেই বলেছি এলাকাটা কৃষি প্রধান। এখানকার মানুষ সারা বছরই কোনো না কোনো সবজি চাষ করে থাকে। তাদের সেই সবজিগুলো এই বাজারে এনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে... পাইকাররা এগুলো সাভার এবং কাওরান বাজারে নিয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম এক মিষ্টির দোকানে। দোকানটা খুব ছোট, তবে অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং মিষ্টি খাওয়ার পর বুঝলাম মিষ্টির স্বাদ এবং মান বেশ ভালো।
মিষ্টির দোকান থেকে বের হতে হতেই মাগরিবের আজান দিয়ে দিল। বাজারেই মসজিদ আছে, আমরা সেখানে গেলাম নামাজ পড়তে।মসজিদটা সম্ভবত অনেক পুরনো।মসজিদের ফ্লোর, ওয়াল এবং দরজা দেখে সেটাই মনে হলো। মসজিদের দরজাটা দু-পাল্লার কাঠের দরজা, কিছুটা ভাঙ্গা ভাঙ্গা। আগে গ্রামের পুরনো অনেক বাড়িতে এরকম দুই পাল্লার কাঠের দরজা দেখা যেত। নামাজ শেষে দেখলাম পুরো মসজিদ ভর্তি মুসল্লী, ভেতরে কোনো খালি জায়গা নেই।
যেহেতু রাত হয়ে গেছে তাই এখন আমাদের ফিরতে হবে।তবে যে রাস্তা দিয়ে এসেছি সেই ভাঙ্গাচুড়া রাস্তা দিয়ে এই রাতের বেলায় আর যাওয়া যাবে না। রনির বুদ্ধিতে অটোরিকশা করে আরো অনেকটা ভেতরে মানে পশ্চিম দিকে সিঙ্গাইর বাজারে (মানিকগঞ্জ) গেলাম। সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে সিঙ্গাইর বাসস্ট্যান্ড পৌছালাম এবং এখান থেকে মেক্সিতে করে সোজা হেমায়েতপুর (সাভার) চলে আসলাম।খুব ক্লান্ত থাকায় মেক্সিতে আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল,ঘুমের চাপে আমার মাথা অন্য একজনের কাঁধে গিয়ে বেশ কয়েকবার ঠেকেছে। এরপর হেমায়েতপুর থেকে বাসে করে সাভার বাসস্ট্যান্ডে পৌছালাম।
বেশ কয়েকবার গাড়ি পাল্টানোর ঝামেলা এবং সময় একটু বেশি লাগলেও এই রাস্তাটা খুবই ভালো। একদম আরামে সাভার পৌঁছে গেছি।
পুরো যাত্রাটা আমার কাছে ভালোই লেগেছে। তবে আমরা যদি আরো দু-এক ঘন্টা আগে খরার চর যেতে পারতাম তবে এই ভালো লাগাটা পরিপূর্ণ রূপ নিত।
LutforRahman
দয়াকরে কমেন্টে স্পাম মেসেজ দেবেন না।