Extraction 2020

মুভিটিকে শুধু মাত্র মুভির দৃষ্টিতে দেখলে বলতে হবে এটা একটা ভাল এ্যাকশন মুভি। আমি এ্যাকশন মুভি পছন্দ করি, তাই এটাকে আমি ১০ এ ৭ দিবো। কিন্তু মুভির প্লটের মধ্যে যুক্তি খুঁজলে মারাত্মক ঝামেলা আছে। যদিও মুভিতে যুক্তি খুঁজতে যাওয়া অযুক্তিক কাজ। তবুও খুঁজতে হয়, কারণ মুভিটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তৈরি।


আমেরিকান নায়করা আফ্রিকায় গিয়ে এইরকম উদ্ধার অভিযান চালায় এমন অনেক মুভি আছে। যেখানে আমরা দেখি নায়ক আফ্রিকার কোন বর্বর,গরীব, বিশৃঙ্খল ও অপরাধপ্রবণ কোন দেশে যায়, যেখানে সে ওই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মনের ইচ্ছা মত গুলি করে মারে।আফ্রিকারন বাহিনী বন্দুক দিয়ে গুলি করার সুযোগই পায় না তার আগেই বোকার মতো তারা মারা যায়। মুভিতে নায়কের এইরকম বীরত্ব দেখে বাহবা দেই,আর নীরিহ আফ্রিকান বাহীনিদের কার্যকলাপ দেখে ভাবি,"এই আফ্রিকান দেশগুলো এখনও কতো পিছিয়ে আছে।" আবার আফ্রিকার গৃহযুদ্ধ নিয়ে কোন মুভি দেখলে দেখবেন ৫বছরের বাচ্চা তার থেকেও লম্ব একে ৪৭ হাতে নিয়ে ঘুরে। এই Extraction মুভিতেও এইসব ফ্লেভার পাবেন, শুধু দেশ থাকবে আফ্রিকার কোন দরিদ্র দেশের জায়গায় এশিয়ার দরিদ্র বাংলাদেশ।

আমেরিকানরা মেক্সিকোকে তাদের মুভিতে এতোটাই খারাপ ভাবে উপস্থাপন করে যে এখন মেক্সিকোর নাম শুনলে চোখের সামনে ভেসে উঠে মাদক, অপরাধ এবং গডফ্যাদারদের অভয়ারণ্য।এই মুভিতে বাংলাদেশকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা মেক্সিকোর চেয়ে কোন অংশে কম না।

বিশ্বের মানুষ যখন এই মুভিটি দেখবে তখন বাংলাদেশ সম্পর্কে ঠিক এমনই ধরনা করবে যেমনটা আমরা মুভি দেখে আফ্রিকার দেশ সম্পর্কে ধারণা করি। কারণ মুভিতে ঢাকার অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, মানুষের জীবন যাপন, সেনাবাহিনীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা পুরোপুরি আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে মিলে যায়।

এই মুভি দেখে যারা বাংলাদেশ সম্পর্কে পূর্বে থেকে কিছু জানে না তারা ভাববে বাংলাদেশ একটি চরম দরিদ্র ও অপরাধপ্রবণ দেশ, যেখানে কোন আইন নেই, শাসন নেই, সরকার নেই, বাইরে থেকে এসে যে কেউ হেলিকপ্টার ফ্লাই করে অপরাধ করতে, আমাদের অদক্ষ সেনাবাহিনী এবং পুলিশ চলে গডফ্যাদারদের নিয়ন্ত্রণে এবং ১০-১২ বছরের ছেলেরা হাতে একে৪৭ নিয়ে ঘুরে। কিন্তু আসলেই কি আমাদের অবস্থা এতোটা খারাপ!?

মুভিতে দেখানো এই বিষয়গুলো কে কিভাবে দেখবে জানি না। কিন্তু আমার কাছে বাংলাদেশকে সোমালিয়া, আফগানিস্তান বা মেক্সিকোর মতো করে উপস্থাপন করাকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি। এই মুভি যদি শুধু আমরা দেখতাম তাহলেও একটা কথা ছিল, কিন্তু এটা দেখেছে বা দেখবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।তাই এইরকম মুভি বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট করবে।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে মুভিতে বাংলা ভাষার উচ্চারণ। বাংলায় কথা বলা অভিনেতাদের উচ্চারণ শুনে বিরক্ত হয়ে আমি ভলিউম কমিয়ে রেখেছি।এতো বিশাল বাজেটের একটা মুভি অথচ বাংলাদেশের একজন শিল্পীকেও নেয়নি,এটা অবাক লাগে।

মুভিতে কালারটোন ব্যবহার মুভির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, কিন্তু এই মুভিতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত হলুদ কালারের কারণে বরং বিরক্ত লেগেছে।হয়তো হলুদ কালারের কারণে দারিদ্র্য ভাব আরো বেশি ফুটে উঠবে এই কারণে ব্যবহার করা হয়েছে।

মুভির ভালো দিক; প্লট নিয়ে চিন্তা না করে Extraction কে শুধু একটি মুভির চোখে দেখলে এটা একটা ভাল এ্যাকশন মুভি।এর এ্যাকশন সিনগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। মুভিটি খুব ফাস্ট,তাই দেখার সময় বোরিং লাগার কথা না।ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বেশ ভালো ছিল। তবে আমি ১০৮০পি ও ৭২০পি'র দুইটাই ডাউনলোড করেছিলাম, কিন্তু দুইটারই সাউন্ড ছিল খুব কম, সাউন্ড বেশি হলে আরো ভালো লাগতো।

ক্রিস এর অভিনয় বরাবরের মতোই ছিল অসাধারণ। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে অনেক দিন পর আমার প্রিয় ইরানি অভিনেত্রী #Golshifteh_Farahani দেখে।এই মেয়েটার চোখের দিকে তাকালে এখনো বুকের বাঁ পাশে একট শান্তির আবেশ বয়ে যায়,যেমনটা বয়ে যেতো আরো ৪-৫ বছর আগেও।বয়স বাড়লেও মেয়েটি দিন দিন আরো সুন্দরী হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.