সেরা ১০টি জাপানিজ এনিমে মুভি

বর্তমানে সারাবিশ্বে জাপানিজ এনিমে খুবই জনপ্রিয়।জাপানিজ এনিমের একটা বিশেষত্ব হচ্ছে,একদম সাধারন গল্পকে তারা খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে, যার জন্য সব শ্রেণীর মানুষের কাছে জাপানিজ এনিমে ভালো লাগে।আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার দেখা সেরা ৬টি জাপানিজ এনিমের সাথে। আপনি যদি কখনো জাপানিজ এনিমে না দেখে থাকেন তাহলে এই লিস্টের যেকোন একটি মুভি দেখে ফেলুন, আমি নিশ্চিত এরপর আপনি জাপনিজ এনিমের প্রেমে পড়ে যাবেন ।

Image Source: https://www.themarysue.com/your-name-still-makes-me-want-to-sob-tears-of-love/


সূচীপত্র (toc)


6.Children Who Chase Lost Voices (2011)

"আশুনা" স্কুল শেষে প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে এক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকে। সেখানে সে ব্যাগে করে নিয়ে আসা খাবার খায় এবং অদ্ভুত একটি যন্ত্র দিয়ে রহস্যময় গান শুনার চেষ্টা করে...যে গান দূরে কোথাও থেকে ভেসে আসে। স্কুল থেকে এই পাহাড় বেশ খানিকটা দূরে, সে একা একা পাহাড়ের একাবাকা পথ, সবুজ বন পেরিয়ে প্রতিদিন এখানে আসে।

একদিন ওই পাহাড়ে যাওয়ার সময় তাকে বিশাল আকৃতির এক জন্তু আক্রমণ করে। সেখানে থেকে এক যুবক তাকে রক্ষা করে।পরে সে জানতে পারে সেই যুবকটি এসেছে আগারথা নামক রহস্যময় এক দেশ থেকে।যে দেশে কেউ যেতে পারে না, এবং সেই দেশ থেকে মৃত মানুষ ফিরিয়ে আনা যায়। 

সেই যুবককের মাধ্যমে আশুনা রুপকথার গল্পের মতো রহস্যময় সেই দেশে যাওয়ার চাবি পায়।আশুনা তার এক স্কুল শিক্ষককের সাথে সেই রহস্যময় দেশে প্রবেশ করে। সেই শিক্ষককের ইচ্ছা তার মৃত স্ত্রীকে আগারথা গিয়ে ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু সেই রূপকথার দেশ যেখানে পানিতে নিঃশ্বাস নেয়া যায়,মেঘ যেখানে ঘাসের সাথে লুকোচুরি খেলে, সেই দেশের মানুষ এবং ভয়ংকর জন্তু তাদেরকে মেনে নিতে পারে না,তারা প্রতি পদে পদে মৃত্যুর সম্মুখীন হতে থাকে।

আনিমে মুভি পছন্দ করলে এই জাপানিজ অ্যাডভেঞ্চার মূলক অ্যানিমে মুভিটি দেখতে পারেন,আপনিও আশুনার সঙ্গী হয়ে চলে যেতে পারেন সেই রহস্যময় রূপকথার গল্পের মতো দেশ 'আগারথা'য়।


5.My Neighbor Totoro (1988)

মুভির গল্পটি মুলত দুই বোনের ফ্যান্টাসিকে ঘিরে তৈরি।সাতসুকি ও মেই দুই বোন তাদের বাবার সাথে গ্রামে পুরাতন একটি বাড়িতে উঠে।

তাদের মা অসুস্থ হওয়ায় হাসাপাতালের নিকটস্থ গ্রামের নতুন এই বাড়িতে তারা আসে। তারা দুই বোনই খুব চঞ্চল,সারাদিন ছুটোছুটি করে। এখানে আসার পর তারা তাদের বাড়িতে খুব রহস্যজনক কিছু একটার উপস্থিতি টের পায়।

হঠাত একদিন খেলতে গিয়ে ছোট বোন মেই বনের ভেতরে গাছের একটি গর্তের মধ্যে পরে যায়। এরপর সেখানে সে একটি বিশাল আকৃতির প্রাণী দেখতে পায়, যে হলো বনের গার্ডিয়ান স্পিরিট। মেই তার নাম দেয় টটোরো,এই টটোরোর আবার কয়েকটা বাচ্চাও আছে।

অদ্ভুত সুন্দর একটি মুভি। স্টুডিও জিভলি'র এই দেড় ঘন্টার মুভিটি দেখার সময় আপনি ভিন্ন এক রূপকথা জগতে হারিয়ে যাবেন।মনের প্রশান্তির জন্য কোন মুভি দেখতে চাইলে এই মুভিটি দেখতে পারেন।


4.The Secret World of Arrietty (2010)

১৪ বছরের আরিয়াত্তি হচ্ছে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বোরোয়ার প্রজাপতির খুব ইনোসেন্ট এবং কিউট একটি মেয়ে।বোরোয়ার প্রজাপতি মানুষের বিশেষত্ব হচ্ছে এরা উচ্চতায় খুব ছোট, বড়জোর একটি বড় সাইজের চায়ের কাপের সমান হবে। এই প্রজাপতির মানুষ অন্য সাধারণ মানুষের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য সংগ্রহ করে তা দিয়ে তাদের জীবন যাপন করে এবং তারা এই পদ্ধতিতে খাদ্য সংগ্রহকে ধার নেয়া বলে।

তো আরিয়াত্তি তার বাবা মায়ের সাথে 'শো' এর খালার বাড়িতে একটি পরিত্যক্ত স্থানে লুকিয়ে বসবাস করে। খুব ছোট্ট একটি বাক্সের ভেতর তাদের বসবাস, যেখানে আছে খুব সাজানো গুছানো কিচেন, ডাইনিং ,ড্রয়িং এবং বেড রুম। খুব রুচিশীল এবং অভিজাত পরিবারের মতো তারাও সেই ছোট্ট বাক্সের ভেতর বসবাস করে।

১২ বছরের 'শো' একদিন তার খালার বাড়িতে হাওয়া পরিবর্তনের জন্য এসে এরিয়াত্তির দেখা পায় এবং সে বুঝতে পারে এই বাড়িতে ছোট মানুষ বসবাস করে। এদিকে শো এর খালার বাড়িতে থাকা গৃহকর্মী ওই ছোট মানুষদের অস্তিত্ব জানার পর তাদের ক্ষতি করার জন্য তাদের পেছনে লাগে। কিন্তু শো আরিয়াত্তি এবং তার পরিবারকে বেঁচে থাকার জন্য সব রকমের সহায্য করে যায়।

স্টুডিও জিবলির আরেকটি অনবদ্য সৃষ্টি হচ্ছে The Secret world of Arrietty. স্টুডিও জিবলির অন্যান্য মুভির মতো এই মুভিতেও আছে দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিক্স, মন ছুঁয়ে যাওয়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, রূপকথার মতো গল্প এবং কবিতার মতো সংলাপ।


3.Castle in the sky (1986)

গল্পটা পাজু, সিতা এবং সিতার সাথে থাকা একটি নেকলেসকে কেন্দ্র করে।পাজু একজন খনিশ্রমিক,বয়স কত হবে ১০-১২ বছর।সে দিনের কাজ শেষ করে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ দেখে অদূরে আকাশ থেকে অদ্ভুত আলো নিচের দিকে নেমে আসছে।সে দৌড়ে আলোর কাছে গিয়ে দেখতে পায় একটি ছোট মেয়ে ধীরে ধীরে মাটির দিকে নেমে আসছে এবং তার গলায় শোভা পাচ্ছে একটি নেকলেসে।যে নেকলেসটি মেয়েটিকে বাতাসে ভাসিয়ে নিচের দিকে নামাচ্ছে।এই ছোট মেয়েটি হচ্ছে সীতা।

জলদস্যু, মুচকা এবং সেনাবাহিনী এরা সবাই সীতাকে তাড়া করে ফিরছে, কারণ তাদের সবারই ওই নেকলেসটি দরকার।যে নেকলেসটি আকাশে ভেসে থাকা এক স্বপ্নের জগত "লাপুতা'র" চাবিকাঠি, যে জগতে আছে ওঠেল ম্পদ। সীতা এবং লুপিতাকে ঘিরে জলদস্যু এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে চলতে থাকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আর এরই মাঝে পাজু চেষ্টা করে সীতাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করতে, এভাবেই মুভি গল্প এগিয়ে যায়।

মুভিটি স্টুডিও জিবলীর, আর এর পরিচালক হায়ায়ো মিয়াজাকি। স্টুডিও জিবলীর অন্যান্য মুভির মতো এটাতেও আছে খুব সুন্দর গল্প এবং মনমুগ্ধকর গ্রাফিক্স।মুভিটা ১৯৮৬ সালের কিন্তু এর চোখ জুড়ানো গ্রাফিক্স দেখে বুঝার উপায় নেই এটা এতো পুরাতন মুভি। এটাই জিবলীর নিজস্ব আর্ট স্টাইল এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সাথে আছে অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক,ইমোশনাল মুহূর্ত গুলোর সাথে যখন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক চলতে থাকে তখন মন উদাস হয়ে যায়।


2.Your Name 2016

মুভিটা মূলত টাইম ট্রাভেলিং নিয়ে বানানো ভিন্ন ধা ধর্মি একটা একটি রোম্যান্টিক ড্র মুভি।জাপানের ইতোমরি নামের একটি ছোট শহরে মিতসুহা নামে এক হাইস্কুল পড়ুয়া কিশোরি বাস করে। সে তার জীবন নিয়ে খুব একটা খুশি না। খুবই একঘেয়ে লাগে তার এই জীবন। সে টোকিও শহরটাকে খুব পছন্দ করে।

এদিকে টোকিও শহরে তাকি নামে একজন হাইস্কুল পড়ুয়া কিশোর বাস করে। সেও তার জীবন নিয়ে খুব একটা খুশি নয়। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দেখা যায় মিতসুহার আত্না চলে গিয়েছে টোকিও শহরের তাকির শরীরে এবং তাকির আত্না চলে গিয়েছে ইতোমরি শহরের মিতসুহার শরীরে।

অর্থাৎ তাকির শরীরে প্রবেশ করে মিতসুহা, আর মিতসুহার শরীরে তাকি এবং এটা কয়েকদিন পর পর হতে থাকে।

প্রথমে তাদের কাছে ব্যাপারটা বিষ্ময়কর লাগে, তবে ধীরে ধীরে তারা এই পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়। এরপর হঠাৎ করেই একদিন এই আত্না বদল হওয়া থেমে যায়।তখন তারা একে অপরকে খুঁজতে বের হয়, এরপর মুভির গল্প অন্য দিকে মোড় নিতে শুরু করে।

আমার দেখা অন্যতম সেরা একটি জাপানিজ এনিমে হচ্ছে ইউর নেম।এর ইউনিক গল্প, অসাধারণ ভিজিওয়াল এফিক্ট, মন ছুঁয়ে যাওয়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আপনাকে স্ক্রীনের সামনে বসে থাকতে বাধ্য করবে। বর্তমানে এটিই এনিমে মুভির ইতিহাসে সবথেকে বেশি আয় করা সিনেমা। 

২২৩ হাজার ভোটে এই মুভির Imdb রেটিং হচ্ছে 8.4,আর Imdb এর সেরা মুভির তালিকায় এই মুভির অবস্থান হচ্ছে ৭০


1.Grave of the Fireflies (1988)

এই মুভির গল্পটি গড়ে উঠেছে সেইটা এবং সেটসুকো নামের দুই ভাই বোনেকে নিয়ে।সেইটার বয়স হবে ১৩ বা ১৪ আর তার ছোট বোন সেটসুকোর বয়স ৪ বা ৫।যোদ্ধ তাদের বাবা মা এবং ঘরবাড়ি সব কেড়ে নেয়। এরপর তারা আশ্রয় নেয় তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে, কিন্তু সেখানেও তারা ভালো ব্যবহার পায় না, এরপর তারা আশ্রয় নেয় পাহাড়ের নিচে পরিত্যাক্ত এক ব্যাঙকারে, কিন্তু এখানে আসার পর তাদের সব অর্থ ও খাদ্য শেষ হয়ে যায়, এরপর তাদের বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ শুরু করে।

যুদ্ধের সময় এই দুই ভাই বোন বেঁচে থাকার জন্য যে নির্মম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল মুভিতে সেটাই দেখানো হয়েছে। এটি এমন একটি মুভি যেটি আপনি একবার দেখলে দ্বিতীয়বার আর দেখার সাহস করবেন না। কারণ মুভিতে ছোট ছোট অসহায় দুই ভাই-বোনের দুঃখ-কষ্ট,যন্ত্রণাএবং তাদের বাঁচার  আকুতি আপনি  এতটাই ফিল করবেন যে দ্বিতীয়বার আর তাদের এই কষ্ট দেখার সাহস আপনি করবেন না।

একটি মুভি যে মনের গভীরে কতটা দাগ রেখে যেতে পারে করতে পারে তা এই মুভি না দেখলে কখনোই বুঝতে পারতাম না। আমি যদি সব জনরা মিলিয়ে আমার দেখা সেরা ১০ টি মুভির তালিকা তৈরি করি,এই মুভিটি সেই লিস্টে থাকবে।

২৫২ হাজার ভোটে এই মুভির Imdb রেটিং হচ্ছে 8.5,আর Imdb এর সেরা মুভির তালিকায় এই মুভির অবস্থান হচ্ছে ৪২


YouTube Link:

সেরা ১০টি জাপানিজ এনিমে মুভি । 6 Best Japanese Anime Movies ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.