তুরস্কের সেরা ৬টি ড্রামা মুভি

 বর্তমানে তুরস্ক হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশিল টিভি সিরিজ রপ্তানিকারক দেশ। ইতিমধ্যে তারা মেক্সিকো ও ব্রাজিলকে টপকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় টিভি সিরিজ রপ্তানিকারক দেশে হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। তবে আজকে আমি তুরস্কের টিভি সিরিজের কথা বলবো না। আজকের বলবো আমার সবচেয়ে প্রিয় 5টি তুরস্কের সিনেমার কথা।যে সিনেমাগুলো দেখলে আপনি তুর্কি সিনেমার প্রেমে পড়ে যাবেন।


                Image Source: https://www.themoviedb.org/movie/277934-sadece-sen


সূচীপত্র (toc)


6.Bliss (2007)

Country:Turkey

গল্প:Bliss 2007 সালে মুক্তি পাওয়া একটি তুর্কি ড্রামা মুভি। মুভিটি একটি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে।এই মুভির গল্প গড়ে উঠেছে তুরস্কের প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত ১৭ বছর বয়সী মরিয়ম নামের এক মেয়ের ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। মরিয়মকে কে ধর্ষণ করেছে কোন একটা অজানা কারণে সে ঐ ব্যক্তির নাম প্রকাশ করতে চায় না। গ্রামের প্রধানরা, তার পরিবার এবং গ্রামের অন্যান্য মানুষ মনে করে এই ঘটনার মধ্যমে মরিয়ম তাদের গ্রামের সম্মান নষ্ট করেছে, সুতরাং তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে।

শুধুমাত্র তার মৃত্যুই পারে গ্রাম এবং তার পরিবারের হারানো সম্মান ফিরিয়ে আনতে। মরিয়মকে আত্মহত্যা করতে বলা হলেও সে আত্মহত্যা করতে যেয়েও ব্যর্থ হয়।কিন্তু তাকে তো মরতেই হবে, তাই মরিয়মের চাচা যে ওই গ্রামের গ্রাম প্রধান সে তার ইস্তাম্বুলে বসবাসরত ছেলে জেমালকে গ্রামে ডেকে আনে।তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ইস্তাম্বুলে যাবার পথে কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে মরিয়মকে হত্যা করে ফেলে রাখার জন্য। আর এই জন্য হাসানকে টাকা এবং একটি পিস্তলও সাথে দিয়ে দেওয়া হয়।

অসম্ভব সুন্দর একটি ড্রামা মুভি। খুব পরিচ্ছন্ন এবং শান্ত একটি মুভি। পুরো মুভি জোরে কেমন যেন একটা অদ্ভুত নীরবতা ছিল।ঠিক মরিয়মর মতো চুপচাপ ও শান্ত, কিন্তু ভেতরে শুধু বেদনা।

মুভির তিনটি জিনিস আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে- এক. মুভিতে অভিনয় করা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাদের সেরা অভিনয় করছে বলে আমার মনে হয়েছে।দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল মুভি সিনেমাটোগ্রাফি এবং কালার গ্রেডিং।

মুভির তৃতীয় ভালো লাগার বিষয়টি হচ্ছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, এক কথায় অসাধারণ।চোখ বন্ধ করে শুনার মত মিউজিক।কেমন যেন অদ্ভুত বেদনা মাখা একটি সুর। আমার খুবই পছন্দের একটি মিউজিক এটি।



5.Sadece Sen (2014)

আলী একজন সাবেক বক্সার। হাজাল একজন অন্ধ এতিম মেয়ে,একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তার বাবা মা মারা যায় এবং সে তার দৃষ্টি শক্তি হারায় ।হাজাল কাজ করে কল সেন্টারে আর আলী দিনে পানি সরবরাহ আর রাতে  parking lot assistant এর কাজ করে। একরাতে night shift এ কাজ করার সময় তার সাথে দেখা হয় হাজাল এর। হাজাল parking lot এ কাজ করা পূর্বের লোকটির সাথে মাঝে মাঝে টিভি দেখতে আসতো। হাজাল এর পর আলীর সাতে টিভি দেখতে  parking lot এ নিয়মিত আসতো। 

এভাবে দুজন আস্তে আস্তে কাছে আসতে থাকে। একরাতে হাজালের বস মাতাল অবস্থায় তার  বাসায় আসে তার সাথে জোর জবরদস্তি করে।ঠিক সেই সময় আলী এসে তাকে সেভ করে।এরপর থেকে আলী হাজালের বাসায় এসে থাকে এবং হাজাল তার জবটি ছেড়ে দেয়।এক সময় আলী জানতে পারে যে দুর্ঘটনায় হাজাল তার বাবা মা এবং তার দৃষ্টি শক্তি হারায় সে দুর্ঘটনার জন্য আলী নিজেই দায়ি।


হাজেল কি পারবে কঠিন সত্য মেনে নিয়ে আলিকে আপন করে নিতে? 

জানতে হলে দেখে ফেলুন  সুন্দর সিনেমাটি।  Sadece Sen কিন্তু  জনপ্রিয়  কোরিয়ান সিনেমা always এর রিমেক । সিনেমাটি ২০১৬ সালে  do lafzon kahani নামে হিন্দিতেও রিমেক হয়েছে  ।

সিনেমার মুল চরিত্র আলি (İbrahim Çelikkol) এবং হাজেল (Belçim Bilgin)।


4.Journey of Hope (1990)

আমরা সবাই ধারণা করি ইউরোপ হচ্ছে স্বপ্নের দেশ, স্বপ্ন পূরণের দেশ। যেখানে গেলে সব স্বপ্ন পূরণ হয়ে যায়, অন্তত আর্থিক দৈন্যতা মেটানোর স্বপ্ন তো পূরণ হয়েই যায়।এই স্বপ্নের দেশে এক বুক আশা নিয়ে অবৈধভাবে যেতে গিয়ে কত স্বপ্ন যে মাঝ রাস্তায় হারিয়ে যায় সেটাই এই মুভিতে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

তুরস্কের প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত দরিদ্র এক পিতা তার পরিবারের অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে নিজের সমস্ত কিছু বিক্রি করে দিয়ে স্ত্রী এবং এক ছেলেকে নিয়ে অবৈধভাবে সুইজারল্যান্ড এর পথে যাত্রা করে। বাড়িতে রেখে যায় তার বৃদ্ধ বাবা মা এবং তার অপর ছয় ছেলে মেয়েকে। কিন্তু তারা জানে না এই যাত্রায় তাদের জন্য সামনে কত ভয়াবহতা, কত নির্মমতা, কতো করুন পরিনতি তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। তাদের অসহায়ত্ব এবং শেষ পরিনত যে কারো চোখে পানি এনে দিতে বাধ্য করবে।মুভিটি ১৯৯০ সালে বিদেশী ভাষা ক্যাটাগরিতে অস্কার প্রাপ্ত।


3.Ayla: The Daughter of War (2017)

সাধারনত একটি emotional মুভির একদম শেষ পর্যায়ে এসে আমাদের চোখে পানি চলে আসে কিন্তু এই মুভিটি অনেকটা আলাদা। মুভির গল্প শুরু হওয়ার কিছু পর থেকেই সোলায়মান এবং আয়লার মধ্যে ছোট ছোট কিছু আবেগ যা দেখে কান্না চলে আসবে, যা মুভির শেষ হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। অসম্ভব আবেগময় একটি মুভি।মুভিটি কোরিয়ার যুদ্ধের সময়ে একটি সত্য ঘটনাকে নিয়ে নির্মিতে।যার কেন্দ্র ছিল তুর্কি সৈন্য সুলেমান এবং ৩-৪ বছরের কোরিয়ান মেয়ে আয়লা।মুভিটি তুরস্ক থেকে ৯০ তম অস্কারে জন্য নমিনেশন কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় থেকে বাদ পড়ে যায়।

কোরিয়া যুদ্ধের সময় দক্ষিণ কোরিয়াকে সাহায্য করতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তুরস্ক একদল সৈন্য পাঠায় দক্ষিণ কোরিয়ায়। তুরস্কের সেই সৈন্যেদর একজন হচ্ছে সুলেমান। সুলেমান একদিন রাতের বেলায় এটি অপারেশনে গিয়ে ৩-৪ বছরের এক কোরিয়ান মেয়েকে খুঁজে পায়, যার বাবা মা যুদ্ধে নিহত হয়েছে।

সে মেয়েটিকে ক্যাম্পে নিয়ে আসে এবং তার নাম দেয় আয়লা(জোৎস্না)। কিছু সময়ের মধ্যেই আয়লা পুরো ক্যাম্পের মধ্যমণি হয়ে উঠে। ক্যাম্পের সবাই তাকে খুবই আদর করে। আয়লা সুলেমানকে বাবা বলে ডাকে। সুলেমান যেখানেই যায় আয়লাও তার সাথে সেখানেই যায়।

একসময় সময় সুলেমানের তুরস্কে ফেরার সময় হয়ে যায়। সে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলে আয়লা কে তুরস্কে নিয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু তারা আয়লাকে নিয়ে যেতে তাকে অনুমুতি দেয় না।সুলেমান আয়লাকে নেয়ার জন্য অনেকভাবেই চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।

শেষ পর্যন্ত সে আয়লাকে ছাড়াই তুরস্কে ফেরত যায়। যাওয়ার সময় সে আয়লাকে বলে যায়, সে যেভাবেই হোক আবার ফেরত আসবে তাকে নেয়ার জন্য।তুরস্কে এসে সুলেমান চেষ্টা করতে থাকে আয়লাকে খুজে বের করতে। জন্মদাতা পিতা না হয়েও সুলেমান আয়লাকে ফিরে পাওয়ার জন্য যে প্রাণপণ চেষ্টা করে সেটা দেখে খুবই কষ্ট লাগে।সুলাইমান কি আয়লাকে আর খুজে পায়?

জানতে হলে মুভিটি দেখে ফেলুন।নিশ্চিত থাকতে পারেন ২ ঘন্টা ৫ মিনিট সময় আপনার বৃথা যাবে না।


2.The Miracle 2015

এই মুভিটি ১৯৬০ দশকের একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। মুভির গল্পট শুরু হয় মাহির নামক এক স্কুল শিক্ষককে নিয়ে, তাকে একটি দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেখানে সরকারি কোন স্কুল নেই। স্কুল তৈরি করার আগেই তাকে এই পাহাড়ি অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে! এর সেই শিক্ষক নিজের উদ্যোগেই স্কুল নির্মাণ শুরু করেন। এখানে এসে এই শিক্ষকের সাথে পরিচয় হয় আজিজের, আজিজ হচ্ছে এই গ্রামের মাতব্বরের ছেলে এবং সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী হবার কারণে সে নিয়মিত ভাবে অবঙগা, অবহেলা ও কটুক্তির স্বীকার হয়ে থাকে।এই মুভির প্রধান চরিত্র হচ্ছে আজিজ, মুভিতে আজিজের জীবন এবং তার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মানুষ এবং ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে।

অসাধারণ একটি মুভি।এই মুভিটা শেষ হলে এই মুভি থেকে অনেক দিন আপনি বের হতে পারবেন না। মুভিটা দেখার সময় আপনার মনে হবে আপনি সত্যি সত্যি জনবিচ্ছিন্ন কিছু মানুষের জীবন যাপন আপনার চোখের দেখছেন, তাদের সুখের আপনি হাসবেন তাদের দুঃখে আপনি কাঁদবেন।এই মুভি ভালো লাগার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এর সিনেমাটোগ্রাফির, তুরস্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতো সুন্দর ভাবে এই মুভিতে দেখানো হয়েছে যে দৃশ্য গুলো শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে।


1.The Miracle 2: 2019

এটি হচ্ছে মুজেজ ১ এর সিকুয়েল।যা ২০১৯ সালে রিলিজ হয়েছে।প্রথম পর্বে আমরা যেমন দেখছিলাম, আজিজ তার স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গ্রামে ফিরে আসে।গ্রামে আসার পর তার সুস্থতার বিষয়ে জানতে চেয়ে জিগ্যেস করা হয়,"কিরে আজিজ, সার্জারি করিয়েছিস নাকি?"

উত্তরে আজিজ বলে,"না, আমি আমার বউয়ের প্রেমে পড়েছি।"দ্বিতীয় অর্থাৎ এই পর্বটিতে মুলত আজিজের সুস্থ হওয়ার গল্প তুলে ধরা হয়েছে। দেখানো হয়েছে কিভাবে আজিজের ওয়াইফের ভালোবাসা, আজিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তি এবং শিক্ষকের সহযোগিতার ফলে আজিজ স্বাভাবিক জীবন ফেরে পায়।

এই তিনটি চরিত্রেকে একত্রে করলে শুধুই ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যায়, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।শত কটুক্তি সত্যেও আজিজের ওয়াইফের আজিজের পাশে থাকার ভালোবাসা,যে ভালোবাসার জন্য আজিজের মনে দৃঢ় প্রত্যয় তৈরি হয় তাকে সুস্থ হতেই হবে,আর আজিজের প্রতি মাহীর নামের সেই শিক্ষকের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। এইসব ভালোবাসাগুলোর একত্রিত রুপ হচ্ছে আজিজের সুস্থ হয়ে উঠা।

আমি জানি না মুভিটি কার কেমন লাগবে। কারণ একেকজনের ভালো লাগা একেকরকম। তবে আমার কাছে মুভিটি খুবই ভালো লেগেছে। খুব ইমোশনাল মুভি,আমি বেশ কয়েকবার কেঁদেছি। বিশেষ করে শেষের দিকে এসে কান্নার শব্দ চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিলো।

আমার মনে হয় এধরনের মুভি মানুষের মধ্যে ভালোবাসার বোধ তৈরিতে সাহায্য করে,হতে পারে সেটা পরিবারের প্রতি ভালোবাসা অথবা সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা।


YouTube Link:তুরস্কের সেরা ৬টি ড্রামা মুভি । যা আপনার মিস করা একদম উচিত হবে না । Top 6 Best Turkey Drama Movie.

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.