বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত একটি টিভি সিরিজ হচ্ছে নেটফ্লিক্সের স্কুইড গেম। প্রথম সিজনে এর এপিসোড সংখ্যা হচ্ছে ৯টি। আজকে আমি এর প্রথম পর্ব গ্রীন লাইট,রেড লাইট এর স্টোরিটি/গল্পটি আপনাদের বলবো।
প্রথম পর্বের শুরুতে ফ্ল্যাশ ব্যাকে দেখা যায় কিছু ছেলে একটি মাঠে স্কুইড গেম খেলছে,আর তখন ব্যাগ্রাউন্ডে কেউ একজন কিভাবে এই খেলা খেলতে হয় সেটা বলছিলো। এরপর ফ্লাশব্যাক থেকে বর্তমান সময়ে দেখানো হয়। যেখানে আমরা সঙ হিউন ও তার মাকে দেখতে পাই
।মাঠে যে ছেলেগুলো খেলেছিলো তার মধ্যে সঙ হিউন একজন ছিলো।
সঙ হিউনের মা সঙ হিউনকে কিছু টাকা দেয়।টাকা দেখে সঙ হিউন খুব খুশী তার মাকে জিজ্ঞেস করে, এইগুলো আমার জন্য নাকি? তখন তার মা বলে,তর মনে নেই আজ হা ইউঙ এর জন্মদিন,ওকে আজকে ডিনারে ভালো কিছু খাওয়াবি।
হা ইয়ঙ হচ্ছে সঙ হিউন এর মেয়ে,যার বয়স ১০ বছর।সঙ হিউন এর সাথে তার স্ত্রীর ডিভোর্স হয়েছে তিনবছর আগে।ডিভোর্স হওয়ার কারন হচ্ছে সঙ হিউনের জুয়ায় আশক্ত।হা হিউন হচ্ছে তার তাদের দুজনের একমাত্র মেয়ে, যে ডিভোর্সের পর থেকে আদালতের নির্দেশে তার মায়ের কাছে থাকে।
তো টাকা পাওয়ার পর সঙ হিউন তার মাকে বলে,এতো অল্প টাকা ভালো কিছু কিভাবে খাওয়াবো? আরো কিছু টাকা দাও।
এরপর তার মা কাজে চলে যাওয়ার পর সঙ হিউন মায়ের এটিএম কার্ড খুঁজে পায়।সে এটিএম বুথে যায় টাকা উঠাতে,তবে দুইবার ভুল পিন দিয়ে টাকা উঠানোর চেস্টার পর তৃতীয়বার সফল হয়।সে এটিএম বুথ থেকে টাকা উঠিয়ে ঘোড়ার রেসিং এ বাজি ধরে,যেখানে তার ঘোড়ার নাম্বার ছিল ছয়। কিন্তু ছয় নম্বর ঘোড়াটি জিতে না,সে খুব হতাশ হয়ে যায়। এরপর সে নয় নাম্বার ঘোড়ায় বাজি ধরে,তবে এবার তার ঘোড়া জিতে যায়,যার ফলে সে ৪৫ লক্ষ ইয়ন,যেটা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় তিন লক্ষ টাকা জিতে যায়। অনেক দিন পর সে এতো টাকা ইনকাম করছে এইজন্য সে অনেক খুশি,আর তাই রিসেপশনিস্টকে ১০ হাজার ইয়ন দিয়ে দেয়।
সে তার মেয়েকে ফোন দিয়ে বলে, আজকে ফ্রাইড চিকেন না,এর থেকেও দামি জিনিস তোমাকে খাওয়াবো। তুমি যা যা খেতে সব স্কুল শেষে লিস্ট করে রাখো। আমি সাতটার সময় এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।
ঠিক তখন সামনে তাকিয়ে দেখে চার পাঁচ জন লোক তার দিকে এগিয়ে আসছে। এদের কাছ থেকেই সে ১৫০ মিলিয়নের মতো ধার নিয়েছিল যেটা সে এখন দিতে পারছে না।
সে দৌড়ে আবার বিল্ডিঙ এর ভেতরে ঢুকে যায়।তখন হঠাৎ তার সাথে এক মেয়ের ধাক্কা লাগলে দুজন ই পড়ে যায়।সে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে লুকায়, কিন্তু লাভ হয় না।পাওয়ানাদারা তাকে ঠিকই ধরে ফেলে।তখন সে জয়ার টাকা তাদের দেয়ার জন্য পকেটে হাত দিয়ে দেখে তার পকেটে কোন টাকা নেই।তখন তার মনে পড়ে একটু আগে এক মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগেছিলো,সেই মেয়েই সম্ভবত তখনই টাকাগুলো নিয়েছে।
হিউন কান্না কাটি করে আরো এক মাসের সময় চায়। এবং বলে এর মধ্যে যে করেই হোক সে টাকা ফেরত দিবে।
তবে এসময় পাওয়ানাদারা তাকে একটি কাগজে সাখখর করিয়ে নেয়,যে কাগজে লেখা আছে, এক মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তারা হিউনের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দিবে।
রাতে তার মেয়েকে ডিনার করাতে হবে, অথচ তার কাছে কোন টাকা নেই।হিউন তখন সেই রিসেপশনিস্ট এর কাছে গিয়ে বলে,মাফ করবেন, আমার দেয়া টাকা কি ফেরত দেয়া যাবে? মেয়েটি টাকা ফেরত দেয়।হিউন সেই টাকা দিয়ে রাতে তার মেয়েকে ডিনার করাতে নিয়ে যায়।
তার মেয়ে জানায় তার ২য় বাবার সাথে আজকে স্টেক খেতে গিয়েছিলো।তবে এখন এই খাবারটিও তার ভালোই লেগেছে।
মেয়েকে তার প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে ফেরত দিয়ে সে স্টেশনে যায়, কিন্তু অল্পের জন্য ট্রেন মিস করে।সে পরের ট্রেনের অপেক্ষা করে,তখন তার পাশে এক লোক এসে বসে।হিউন ভাবে লোকটি হয়তো ব্যাঙকের কোন লোক হবে তাই সে বলে, আমার কোন লোন লাগবে না।
তখন ওই লোকটা তার সাথে থাকা ব্রিফকেস খুলে,হিউন দেখে সেখানে দুইটি নীল ও লাল রঙের খাম এবং অনেক টাকা। লোকটি হিউনকে বলে, তুমি আমার সাথে দাকজি খেলবে? জিতলেই ১ লক্ষ ইয়ন পাবে,তবে হারলে আমাকে ১ ইয়ন দিতে হবে।
হিউন রাজী হয়।দাকজির খেলার নিয়মটা হচ্ছে,নীল খাম দিয়ে নীচে থাকা লাল খামকে আঘাত করতে হবে, এবং এর ফলে লাল খাম উল্টে যায় তাহলে যে নীল খাম ছুড়বে সে জীতে যাবে,আর খাম যদি না উল্টায় তাহলে সে হেরে যাবে।
প্রথম বার হিউন হেরে যায়,হিউনের কাছে কোন টাকা নেই।তাই ওই লোকটা টাকার পরিবর্তে হিউনকে এক চড় দেয়, এভাবে বেশ কয়েকবার হিউন হেরে যায় এবং লোকটা তাকে চড় দেয়।তবে একবার হিউন জিতে এবং ১ লক্ষ ইয়ন পায়।
এরপর ওই লোকটা হিয়নকে বলে, তুমি চাইলে আমাদের সাথে খেলে এর থেকে অনেক বেশি টাকা ইনকাম করতে পারো। লোকটি হিউনকে একটা কার্ড দিয়ে বলে, আমাদের আর বেশি সীট খালি নেই,খেলতে চাইলে ফোন দিও।
রাতে বাড়িতে আসলে তার মাকে হিউনকে বলে,তুই কি জানিস তর মেয়েকে নিয়ে তার বাবা মা আমেরিকায় চলে যাবে? হিউন কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।তখন তার মনে পড়ে আদালতে নির্দেশ ছিল মেয়ে তার মায়ের কাছেই থাকবে।
আমি একজনের সাথে কথা বলে দেখেছি,বাবা যদি প্রমান করতে পারে মেয়েকে লালন পালন করার আর্থিক সামর্থ্য তার আছে, তাহলে মেয়েকে সে ফেরত পেতে পারে।তাই সে চেষ্টা করলে তার মেয়েকে তার সাথে রাখতে পারে।
রাতে সেই রেল স্টেশনের লোকটার কথা মনে পড়ে যায়।হিউন কার্ডে থাকা নাম্বারে ফোন দিয়ে গেম খেলার করা নিশ্চিত করে।
এরপর একদিন রাতে আমরা দেখতে পাই, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হিউন অপেক্ষা করছিলো। এরপর একটি মাইক্রোবাস এসে তার সামনে থামে, এবং তাকে কোড জিগ্গেস করে।সে বলে,রেড লাইট,গ্রিন লাইট।
এরপর তাকে গাড়িতে উঠানো হয়।সে গাড়িতে উঠার পর গাড়িতে গ্যাসের মতো কিছু একটা ছাড়া হয়,এর পর হিউন গান হারিয়ে ফেলে।
এরপর যখন তার গান ফিরে তখন সে দেখে বিশাল একটা হল রুম, যেখান তার মতো আরো ৪৫৫ জনকে আনা হয়েছে এই গেম খেলার জন্য, এবং হিউন হচ্ছে সর্বশেষ অর্থাৎ ৪৫৬ তম।এখন হিউনের সাথে একজন বৃদ্ধ লোকের কথা হচ্ছে যার সিরিয়াল হচ্ছে ১.
এরপর কিছু লাল ড্রস এবং মুখে মুখোশ পরা মানুষকে দেখা যায় গোপন কোন রুমে বসে এখানে খেলতে আসা মানুষদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।এখনে কালো মুখোশ পরা একজনকে দেখা যায় যে এই খেলার নিয়ন্ত্রক। এখানে এসে হিউনের সাথে সেই মেয়েটির দেখা হয়ে যায় যার সাথে ধাক্কা লাগার পর সে তার টাকা হারিয়েছিলো।
এরপর তাদের সবাইকে ডেকে এই খেলার ইন্সট্রাকশন দেয়া হয়।তাদের জানানো হয়, এখানে সবাইকে ছয়দিনে ছয়টি খেলায় অংশগ্রহণ করতে হবে।যে এই ছয়টি খেলার মাধ্যে ছয়টিতেই জিতবে তাকে অনেক টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।হিউন জিগ্গেস করে কতটাকা পুরস্কার দেয়া হবে? তারা জানায় পুরস্কারের অংকটা প্রথম খেলার পর জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রথম খেলায় অংশ নেয়ার জন্য তাদেরকে একটি মাঠে নেয়া হয়,যার চারদিক দিয়ে আটকানো।তারা মাঠে প্রবেশের গেট বন্ধ করে দেয়া হয়।
মাঠের অন্য প্রান্তে একটি পুতুল দেখা যায়,যেটা আসলে একটি রোবট। সবাইকে তখন প্রথম খেলার নির্দেশনা দেয়া হয়।প্রথম খেলার নাম হচ্ছে গ্রিন লাইট,রেড লাইট।এই পুতুল যখন অন্যদিকে ঘুরে বলবে রেগেই লাইট ,গ্রিন লাইট,তখন সবাই আগাতে পারবে। পুতুলটা যখন এটা বলা বন্ধ করে দিবে, এরপর সে ঘুরে যাকে নড়াতে দেখবে সে বাদ পড়ে যাবে।
এভাবে দৌড়ে যা ওই পুতুলের কাছে থাকা লাল মার্ক করা সীমানা নির্দিষ্ট সময়ের আগে পার হতে পারবে তারাই এই খেলায় জিতবে তারাই,আর বাকিরা বাদ পড়ে যাবে।
খেলা শুরু হয়। পুতুলটা গ্রিন লাইট,রেড লাইট বলতে শুরু করে,দুই একজন করে সবাই আগাতে থাকে। পুতুলটি বলা বন্ধ করে ঘুরে একজনকে নড়তে দেখতে পায়, এবং সাথে সাথে তাকে গুলি করে মেরে ফেলে। অনেকেই তখনো মরার বিষয়টি বুঝতে পারেনি। আবার খেলা শুরু হয়, এবার একজন সেই মৃত লোকটির কাছে গিয়ে দেখে সে মারা গেছে,সে চিৎকার করে দৌড়াতে থাকে। পুতুলটি ঘুরে তাকে গুলি করে মেরে ফেলে, এবার সবাই বুঝতে পারে এই খেলা থেকে বাদ পড়া মানে গুলি করে মেরে ফেলা। এরপর সবাই এদিকে সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে,আর তখন নিয়ম অনুযায়ী নড়াচড়া করা সবাইকে মেরে ফেলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে যারা লাল সীমানা পার হতে পারেনি তাদের সবাইকে মেরে ফেলা হয়।
এরপর আমরা দেখতে পাই যে স্থানটিতে এতোক্ষণ এই খেলা হচ্ছিল সেটা একটির দ্বিপের মাটির নিচে অবস্থিত,তাই এখানে পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আসার বা খবর পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
এই ছিল স্কুইড গেমের প্রথম পর্বের গল্প, খুব শিগগিরই আসবো পরের পর্ব নিয়ে। ভালো থাকবেন সবাই, আল্লাহ হাফেজ।
YouTube Link:Squid Game Episode 1 Summarized In Bangla
দয়াকরে কমেন্টে স্পাম মেসেজ দেবেন না।