বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি

৯০ এর পর এই দেশে ছাত্র রাজনীতির ভালো অর্জন কি এটা নিয়ে আমার মনে মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে।৯০ দশকের কথা বলতে পারবো না, তবে ২০০০ এর পরে যে ছাত্র রাজনীতির কোন ভালো দিক নেই এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়।৯০ দশকেও নিশ্চয়ই ভালো কিছু ছিল না, থাকলে তো কোন ভাবে এখন জানতে পারতাম।

ভালো কিছু না থাকলেও খারাপের কোন কমতি নেই,এহেন কোন অপকর্ম নেই যা ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে হচ্ছে না। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক সেবন এবং বিক্রি, ইভটিজিং, ধর্ষন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নারী নির্যাতন এবং হত্যা সব কাজেই এরা খুব পারদর্শী।

প্রথম আলোর হিসাবে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলে নিহত হন ৩৯ জন। আর এই সময়ে ছাত্রলীগের হাতে প্রাণ হারান অন্য সংগঠনের ১৫ জন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ছাত্রদলের হাতেও কম বেশি এমন খুন হয়েছে।

এতো কিছুর পরেও সাধারণত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছাত্ররাজনীতিতে প্রবেশ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে...আর শাসকগোষ্ঠীও এদের দমন করার পরিবর্তে আরো বেশি করে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে।এখানে অবশ্য ছাত্র এবং শাসকগোষ্ঠীর উভয়ের বিশাল স্বার্থ জড়িয়ে আছে।

সাধারণ ছাত্ররা ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করে রাজনৈতিক ক্ষমতার সুবিধা, লেখাপড়া পরবর্তী চাকরির বা অর্থনৈতিক সুবিধা, নিজ এবং পারিবারিক নিরাপত্তার সুবিধা পাওয়ার জন্য। এরা বলে তারা বঙ্গবন্ধু এবং জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী এবং সেই নীতিতে চলে। এইগুলো হচ্ছে মুখের কথা,ভেতরে ভেতরে তারা আসলে কোন নীতি আদর্শে বিশ্বাস করে না।তারা একটা জিনিসই বিশ্বাস করে, সেটা হচ্ছে শাসকগোষ্ঠীর সাথে ক্ষমতার অংশীদার হয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা। এখানে নীতি-আদর্শের কেউ ধার ধারে না, বঙ্গবন্ধু এবং জিয়ার নীতি-আদর্শে যদি তারা বিশ্বাস'ই করত তাহলে এদেশে ছাত্ররাজনীতি অনেক অনেক ভাল হত।

ছাত্র রাজনীতির ভয়াবহতা এখন ছড়িয়ে পড়েছে স্কুল পর্যায়েও। হাইস্কুল পর্যায়ে ছাত্রদের মধ্যে গ্যাং গ্রুপ গড়ে ওঠা এটা এখন আমাদের সমাজে একটা খুবই পরিচিত চিত্র। ৪০-৫০ জন বা তারও বেশি কিশোরদের নিয়ে তৈরি এই গ্যাং এর সদস্যরা মারামারি, নেশা, ইভটিজিং সহ যত খারাপ কাজই করুক না কেন তাদের কোন কিছু বলা যায় না। কারণ এই বয়সী ছেলেরাও রাজনৈতিক ভাবে আশ্রয় পায় বা রাজনৈতিক কাজে তাদের ব্যবহার করা হয়। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় একজন ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কর্মীর যতো ক্ষমতা পুলিশেরও ওতো ক্ষমতা নেই।

আর রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে তাদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি না থাকলে সরকার-বিরোধী আন্দোলন তৈরি হতে পারে এই ভয়ে ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতি রাখা হয়। সরকার-বিরোধী কোনো আন্দোলন হলে আন্দোলনকারীদের উপর হাতুড়ি দিয়ে হামলা করার জন্য এই দলীয় সংগঠন ব্যবহার করা হয়।যাতে কেউ সরকারবিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে।

ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের মেধাকেও নষ্ট করে দেয়, বুয়েটের ঘটনা তার প্রমাণ। অনেক মনে করতে পারে ছাত্র রাজনীতি থেকে ভালো রাজনীতিবিদ তৈরি হয়...কতো ভালো রাজনীতিবিদ তৈরি হয় সেটা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়।

বর্তমান ছাত্র রাজনীতি দেশের কোনো প্রয়োজনে কাজে লাগে না। কাজে লাগে রাজনৈতিক দলের, তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এবং কিছু ব্যক্তির স্বার্থ উদ্ধারের জন্য।

তাহলে কি প্রয়োজন এই ছাত্র রাজনীতির!!!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.