এই জাতিসংঘের কি প্রয়োজন!!

জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এখন সব শান্তিকামীদের নিয়ে শান্তির নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে।এই শান্তি নাটকের মুল হোতা জাতিসংঘের কার্যকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমার মনে সবসময় প্রশ্ন জাগে। আসলেই জাতিসংঘের কাজটা কি?? প্রয়োজনীয়তাই বা কি?বর্তমান বিশ্বে শান্তি রক্ষায় আদৌও কি এর গুরুত্ব আছে?

রুয়ান্ডায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতিতে চলা গণহত্যায় মারা গেছে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। মানুষ হত্যা বন্ধ করতে জাতিসংঘ কিছুই করতে পারেনি। সত্য ঘটনা অবলম্বনে রোয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে নির্মিত কয়েকটি মুভি (Hotel Rwanda, Shooting Dogs, Shake Hands With The Devil) দেখলে বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

রুয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে নির্মিত মুভির নাম Shooting Dogs রাখার কারণ হচ্ছে, UN ক্যাম্পের বাইরে তুতসিদের লাশগুলো যখন কুকুর খাচ্ছিল তখন কুকুরদের তাড়ানোর জন্য শান্তিরক্ষার সৈন্যরা গুলি করতে চায়। ধর্মযাজক ক্রিস্টোফার তখন খুব ক্ষোভ নিয়ে সৈন্যদের বলে-
Were they shooting at you?
This is according to your mandate, if you are going to shoot the dogs ,then the dogs must have been shooting at you first.

অন্যকে বাঁচাবে কি, জাতিসংঘ তো নিজেদের শান্তিরক্ষা বাহিনীকে'ই রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে না। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত The Siege of Jadotville এই মুভিটি দেখুন....জাতিসংঘ কতটা অসাড় একটি সংস্থা সেটা বুঝতে পারা যাবে। কঙ্গোর শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত আইরিশ সৈন্যরা বিদ্রোহীদের সাথে লড়তে গিয়ে করুন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল...কিন্তু তাদের বাঁচাতে জাতিসংঘ কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি।এই অবরুদ্ধ সৈন্যরা তাদের নিজেদের জীবন বাঁচাতে নিজেরাই শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছ.. কিন্তু বাইরে থেকে কোন সাহায্য পায়নি... বরং দেশে ফিরে গিয়ে তারা বিচারের সম্মুখীন হয়েছে।

জন্মের পর থেকে ফিলিস্তিন এবং কাশ্মীর সমস্যার কথা শুনে আসছি, এখন পর্যন্ত যার কোন সমাধান হয়নি।বরং এই দুই অঞ্চলের পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, আমি মরে যাব আমার ছেলে-মেয়েও মরে যাবে, কিন্তু কাশ্মীর এবং ফিলিস্তিনিদের সমস্যার সমাধান আর হবে না।যেই ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই ফিলিস্তিনিদের নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।তারা যখন তাদের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে, তখন জাতিসংঘের কাছে তাদেরকে বলতে হয়, "আমরা কোন জঙ্গি বা সন্ত্রাসী না, আমরা আসলে স্বাধীনতাকামী।" কাশ্মীরে
এখন আর কোনো স্বাধীনতাকামী অবশিষ্ট নেই, আন্তর্জাতিক মহলের কাছে এখন সবাই জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি।

সাদ্দাম হোসেনের কাছে মরণঘাতী অস্ত্র আছে, এই মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে ইরাকে হামলা চালিয়ে আমেরিকা লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করল, যেখান থেকে জন্ম নিল আইএস এবং সেখান থেকে জন্ম নিল সারা বিশ্বের অশান্তি... জাতিসংঘের কি ভুমিকা ছিল এখানে!!!

ঠিক একইভাবে জাতিসংঘ চরম ব্যর্থ লিবিয়া এবং সিরিয়ায়ও। লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাঁচাতে তারা জোরদার কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি।বলা হয় সিরিয়া হচ্ছে আমেরিকা এবং রাশিয়ার অস্ত্র পরীক্ষাগার, তারা তাদের নতুন উদ্ভাবন করা অস্ত্র সেখানে পরীক্ষা করে এবং ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।আমেরিকা এবং রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশগুলোর বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষমতা জাতিসংঘের কখনো ছিল না এবং এখনো নেই। এখনো শান্তির নামে মাঝে মাঝে আফগানিস্তানে বোমা ফেলে ডজন ডজন নিরীহ মানুষকে আমেরিকা হত্যা করে, কিন্তু জাতিসংঘ এগুলো চখেও দেখে না।

সৌদি জোট প্রতিনিয়ত ইয়েমেনে বোমা ফেলে হাজার হাজার ইয়েমেনিকে হত্যা করতেছে, কিন্তু এগুলো বন্ধ করতে জাতিসংঘের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ এখনো দেখা যায়নি।

একের পর এক অন্যায় ভাবে আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধে ইরানের অর্থনীতির অবস্থা জর্জরিত, কিন্তু এখানে জাতিসংঘের কোন ভূমিকা দেখা যায় না। ইরানের অপরাধ, সে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চাই (প্রমাণিত না)। আর চাইলেই বা কি!! আমেরিকা পারমানবিক বোমা রাখতে পারলে অন্য দেশ পারবে না কেন!!!

মিশরের গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মুরসিকে অন্যায় ভাবে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে শত শত মানুষকে হত্যা করে, হাজার হাজার মানুষকে বন্দি করে ক্ষমতায় আসে স্বৈরশাসক সিসি.... এবং এখন সেই সিসি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিবে। বিষয়টা খুবই মজার!

এই জাতিসংঘের অধিবেশনে বসে আমেরিকার দূত সবাইকে থ্রেট দেয়, 'যদি কোন রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে ভোট তাহলে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই রাষ্ট্রকে দেখে নেবে"...

এই জাতিসংঘ উপস্থিতিতে সার্বরা হাজার হাজার বসনীয়'কে হত্যা করেছে.... জাতিসংঘ কিছুই করতে পারেনি, বরং অভিযোগ আছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা সার্ব বাহীনির কাছে তেল বিক্রি করতো।

মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘ কোন কিছুই করতে পারেনি, কিছু তদন্ত আর মায়ানমারের কয়েকজনের ওপর অবরোধ আরোপ করা ছাড়া।রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে বাংলাদেশ যদি জাতিসংঘের উপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে আগামী ৫০ বছরেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারবে না। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হলে চীনসহ আরো কয়েকটি দেশের সাথে নিয়ে বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে।

মায়ানমারের মত দেশের বিরুদ্ধে যে জাতিসংঘ যাওয়ার ক্ষমতা রাখে না, সেই জাতিসংঘ দিয়ে আমাদের হবেটা কি!!!?? শুধু তদন্ত, ভোট, নিন্দা প্রস্তাব, বিশেষ এবং সাধারণ অধিবেশন ডাকা পর্যন্তই জাতিসংঘের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ।

শান্তি স্থাপন এবং জনসাধারণকে রক্ষায় জাতিসংঘ ব্যর্থ হলেও একটি কাজ জাতিসংঘ বেশ ভাল পারে। সেটা হচ্ছে, যুদ্ধ-পরবর্তী অথবা গণহত্যা পরবর্তী সময়ে মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ এবং অর্থ সহায়তা দেয়া, এই কাজটা জাতিসংঘ বেশ ভালো পারে।অনেকটা ছোটবেলায় দেখা সেই বাংলা ছবির মতো, সব মারামারি শেষ হওয়ার পর হঠাৎ পুলিশ এসে বলে, "কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।" জাতিসংঘও যুদ্ধ এবং হত্যা শেষ হলে মানুষের কাছে গিয়ে বলে,"কারো কি আশ্রয় অথবা খাদ্য লাগবে, আমরা তোমাদের পাশে আছি!!"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.