Our Boys 2019: একটি HBO টিভি মিনি সিরিজ

🔴Our Boys 2019: ২০১৪ সালে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল যুদ্ধের সময়কালে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ১০ পর্বের একটি HBO মিনি টিভি সিরিজ।

⚫প্রেক্ষাপট: সেপ্টেম্বর ২০১৪, তিন ইসরাইলি কিশোর অপহরণ হয়, ইসরাইলের দাবি এই অপহরণ হামাস করেছে। যদিও হামাস বলেছে তারা অপহরণ করেনি।
এই অপহরণ নিয়ে ইসরাইলে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং ফিলিস্তিন বিরোধী জনমত তৈরি হয়। অপহরণের একদিন পরে ওই তিন কিশোরের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। এর ঠিক দু'দিন পর এক রাতে পূর্ব জেরুজালেম থেকে ১৬ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি কিশোর মোহাম্মদ আবু খাদিরকে অপহরণ করা হয় এবং পরের দিন সকালে জেরুজালেম ফরেস্টের রাস্তার পাশে ছেলেটির আগুনে পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়।
ছেলেটির বাবা মা এবং ফিলিস্তিনিদের ধারণা এই অপহরণ এবং হত্যা ইসরাইলি সেটেলাররা করেছে। কিন্তু ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী ফিলিস্তিনিদের এই ধারনা মেনে নিতে নারাজ, তারা মনে করে এর পিছনে আরবরাও থাকতে পারে।মোহাম্মদ আবু খাদিরকে হত্যার পর ফিলিস্তিনে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়... যা অনেকদিন পর্যন্ত চলমান থাকে।এই বিক্ষোভ এবং আন্তর্জাতিক চাপে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত এই হত্যার তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হয়।এরই মাঝে ইসরাইল গাঁজায় সামরিক অভিযান চালায়, অন্যদিকে হাসাম ইসরাইলের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে রকেট ছুড়তে থাকে।

এই মিনি সিরিজটিতে ফিলিস্তিনি কিশোর মোহাম্মদ আবু খাদিরকে কিভাবে অপহরণ করা হলো, এর সাথে কে কে জড়িত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে চলা বিচারকার্য তুলে ধরা হয়েছে।

🔴আমার মন্তব্য; তবে এই সিরিজ শুধুমাত্র ওই বিষয়গুলোর মধ্যেই থেমে থাকেনি। এখানে দেখানো হয়েছে ইসরাইলিদের মধ্যে থাকা মারাত্মক রকম বর্ণবাদী আচরণ, ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য এবং ইহুদিদের মধ্যেও যে ধর্মীয় উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী আছে এবং সেটা প্রভাবশালী সেটাও এই সিরিজের খুব সাহসীকতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে।

খাদিরকে অপহরণ করার আগের দিন রাতে অন্য এক ফিলিস্তিনি ছেলেকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়, তবে সেটা ব্যর্থ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও কোন অভিযোগ গ্রহণ করেনি, কারণ ওই ছেলের মা বারবার বলছিল অপহরণকারীরা ছিল ইসরাইলি সেটেলার।সেই কারণে পুলিশ সেটেলারদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেয়নি। ওইদিন যদি ব্যাবস্থা গ্রহন করা হতো তাহলে খাদিরকে মরতে হতো না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইসরাইলের আইন অনুযায়ী কোনো ফিলিস্তিনি যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়, কিন্তু এই আইন ইসরাইলিদের বেলায় প্রযোজ্য না।খাদিরের বাবা-মা তাদের ছেলেকে হত্যার জন্য যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল তাদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে হাইকোর্টের আবেদন করেছিল, কিন্তু কোর্ট সেই আবেদন সাথে সাথে খারিজ করে দেয়।এই হলো ইসরাইলের একচোখা বৈষম্যমূলক আইন।এই সবকিছু এই সিরিজে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাধারণত ইসরাইলের নীতির বিরুদ্ধে কোন টিভি সিরিজ বা মুভি দেখা যায় না। কিন্তু এই সিরিজটি একেবারেই ব্যতিক্রম। এখানে সত্যটা তুলে ধরা হয়েছে ,সেটা ইসরাইল নীতির বিরুদ্ধে গেলেও। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এর পরিচালক থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত কলাকুশলী ইসরায়েলি ইহুদি এবং সিরিজটি পুরো শুটিং হয়েছে ইসরাইলে।

এজন্যই এই সিরিজ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।ইসরায়েলিরা মনে করে এই সিরিজটিতে ইজরায়েলিদের খুব খারাপ ভাবে দেখানো হয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ছেলে টুইট করে বলেছে, এই সিরিজে ইসরাঈলকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা দেখে ষ মানুষ বলবে ইসরাইলিরা ঠান্ডা মাথার খুনি।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিরিজটির সহ প্রযোজক ইসরাইলি টিভি চ্যানেলকে বয়কট করতে বলেছিল।১২০টি ইসরাইলি পরিবার এইবিও এর কাছে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছিল, এই সিরিজে ইসরাইলি নিহত তিন কিশোরের মৃত্যুর থেকে অনেক বেশি সহমর্মিতা দেখানো হয়েছে ফিলিস্তিনির মৃত্যুকে।

সিরিজটি খুবই খুবই রিয়ালিস্টিক। ইসরাইলিদের বিক্ষোভ, ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর  মধ্যে চলা সংঘর্ষ এত ব্যাপক পরিসরে দেখানো হয়েছে যে দেখে মনে হবে সত্যিই সত্যিই মনে হয় এমনটা ঘটতেছে।চিত্রনাট্যকে আরো সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে সিরিজে বেশ কিছু সত্যি ঘটনার ফুটেজ যুক্ত করা হয়েছে।

এতে অভিনয় করা প্রত্যেকটি চরিত্র নিজেদের চরিত্রকে খুব ভালো ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি কিশোর খাদিরের বাবা-মা এবং ইহুদি তদন্ত কর্মকর্তা সিমনের চরিত্রে অভিনয় ছিল অসাধারণ এবং অনেকদিন মনে রাখার মত। একজন অসহায় কিন্তু হার না মানা বাবাকে দেখলে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। আবার শত বাধার মধ্যেও নিরপেক্ষ তদন্ত চালিয়ে যাওয়া ইসরাইলি তদন্ত কর্মকর্তা সিমন এবং তার দলকে দেখে মনের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। মনে হয় ইসরাইলে এখনো কিছু মানুষ আছে যারা আসলেই নিরপেক্ষ থাকতে চায়।

আইএমডিবি'তে এই সিরিজটির রেটিং মাত্র ৭, কয়েকদিন আগে ছিল ৬.৮। তারও আগে সম্ভবত আরো অনেক কম ছিল। অথচ এটা মাত্র ৭ পাওয়ার মতো সিরিজ না, এর রেটিং হওয়া উচিত কমপক্ষে ৮। তাহলে ৭ পেলো কিভাবে? এখন পর্যন্ত এইএমডিবি'তে এই সিরিজে যে ২৬ শত জন রেটিং দিয়েছে তার মধ্যে প্রায় ১০০০ জন মাত্র ১ রেটিং দিয়েছে।১ রেটিং কারা দিতে পারে সেটা তো ধারনাই করা যায় এবং কেন দিবে সেটাও বোঝা যায়। 

কারণ তারা চায় না এটা বেশি মানুষ দেখুক। এটার রেটিং যদি আরো বেশি হতো তাহলে আরও অনেক মানুষ সিরিজটি দেখত, আরও অনেক মানুষ সত্যটা জানতে পারত, আরও অনেক মানুষ ইসরাইলিদের বর্ণবাদী আচরণ দেখতে পেত, আরও অনেক মানুষ ইজরায়েলের এক চোখা নীতি দেখতে পেত, ইহুদিদের মধ্যেও যে উগ্রবাদী সন্ত্রাসী আছে সেটা আরো অনেক মানুষ জানতে পারত। সুতরাং এই জন্যই তারা চায় না এটা বেশি মানুষ দেখুক।

সময় এবং সুযোগ পেলে অবশ্যই অবশ্যই এই সিরিজটি দেখবেন এবং সম্ভব হলে দেখা শেষে অবশ্যই আইএমডিবি এ গিয়ে একটি ভাল রেটিং দিয়ে আসবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.